খুলনার পাইকগাছায় রংধনু ক্লিনিকে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নবজাতকের অভিভাবকরা। গত ৯ ডিসেম্বর পৌরসদরস্থ হাসপাতাল ক্রস রোড এলাকার রংধনু ক্লিনিকে শিশু মৃত্যুর এ ঘটনাটি ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, গত ৮ ডিসেম্বর সকালে পাশ্ববর্তী কয়রা উপজেলার চাঁদনিরচক এলাকার বাসিন্দা লাবণ্য মন্ডলের স্ত্রী স্বর্ণালী সরকার (২২) এর প্রসব বেদনা শুরু হলে ওই দিন সকালে তাকে পাইকগাছার রংধনু ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
দুপুরের পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ স্বর্ণালীর সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হবে বলে তার পরিবারকে জানায়। এর পর বেলা ৪টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (সার্জারী) মোঃ শরিফুল ইসলাম ঐ ক্লিনিকে এসে স্বর্ণালী সরকারের সিজারিয়ান অপারেশন করেন। ওই নারীর একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, গত ৮ ডিসেম্বর বেলা ৪টায় সিজারিয়ান অপারেশনে নবজাতকের জন্ম হয়। তবে জন্মের পর থেকে শিশুটির শরীর প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল। এ বিষয়ে তারা ক্লিনিকের চিকিৎসকসহ নার্সদের বার বার জানালে তারা মা ও শিশু উভয়েই সম্পূর্ণ সুস্থ্য রয়েছেন জানিয়ে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে বলেন। তবে রাত বেটে গেলেও নবজাতকের শরীর ঠান্ডা ও অস্বাভাবিকত্ব না কাটায় পরদিন ৯ ডিসেম্বর সকালে তারা পুনরায় বিষয়টি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা শিশুটির চিকিৎসায় অপারগতা প্রকাশ করে পৌরসদরস্থ অপর নূরজাহান ক্লিনিকে নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।
এরপর সকাল ১০টায় নবজাতকটিকে পৌরসদরের নূরজাহান ক্লিনিকে নেওয়া হলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক শিশুটি জন্ম থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ধারণা করে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে বলেন।
তারপর বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে নবজাতককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটির চিকিৎসা শুরুর পর দুপুর ১২ টার দিকে তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়। সর্বশেষ বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায়, স্বর্ণালীর দাদা আকাশ সরকার জানান, গত ৮ ডিসেম্বর পাইকগাছার রংধনু ক্লিনিকে তার বোনের সিজারিয়ান অপারেশনে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েই শিশুটির জন্ম হয় দাবি করে তিনি বলেন, জন্মের পর শিশুটির শরীরের বর্ণ স্বাভাবিক ছিল না। এমনকি জন্ম থেকেই তার শরীর প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল । বিষয়টি ক্লিনিকে দায়িত্বরত নার্সসহ কর্তৃপক্ষকে জানালেও সেব্যাপারে তারা কোন কর্নপাত করেননি। এমনকি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মা ও শিশু উভয়েই সম্পূর্ণ সুস্থ্য রয়েছে দাবি করে বিষটি প্রথমত এড়িয়ে যান।
পরদিন ৯ ডিসেম্বর সকালে শিশুটির শারিরীক অবস্থা আরও খারাপ হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে অন্যত্র চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেন।
সর্বশেষ ৯ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় অপর নূরজাহান ক্লিনিক হয়ে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঐ দিন বিকেলেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনায় আকাশ অভিযোগের সাথে দাবি করেন, ক্লিনিকটিতে কোন শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। বিশেষ করে জন্মের পর নবজাতককে দেখে বুঝতেই পারেননি যে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত! আর তেমনটা হলে শিশু বিশেষজ্ঞ বিহীন তারা সিজারিয়ান অপারেশন কেন করান? প্রশ্ন আকাশসহ স্বজনদের। এমনকি ক্লিনিক থেকে উল্টো তাদেরকে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি দেখানো হয় বলেও অভিযোগ করা হয় স্বজনদের পক্ষে।
এ ব্যাপারে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের নিকট জানতে চাইলে তারা বলেন, নবজাতকের মৃত্যুতে তাদের কিইবা করার আছে? এমন উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে তাদের দাবি, ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করবেনা বলে এমন নাটক করছিল তারা।
এদিকে নবজাতককে না পেয়ে তার মা’ স্বর্ণালী কান্না কাটি করতে থাকলে পরিবারের পক্ষে তাকে সান্তনা দিয়ে জানানো হচ্ছে, তার বাচ্চা অসুস্থ্য থাকায় তাকে খুলনায় রাখা হয়েছে। সর্বশেষ ১৪ ডিসেম্বর স্বর্ণালীকে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সন্তানকে না পেয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
এব্যপারে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (সার্জারী) মোঃ শরিফুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার দায়িত্ব সার্জারী করা পরের দায়িত্ব ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের। তবে জন্মের পর শিশুটিকে স্বাভাবিক মনে হয়েছিল বলেও দাবি তার।
এদিকে রংধনু ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুকুমারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশুটির মৃত্যুর পর সশ্লিষ্ট চিকিৎসরা ডায়াগনসিস করে জানতে পারেন তার নাকি গর্ভাবস্থায় হার্টের সমস্যা ছিল, যাতে তার মৃত্যু হয়েছে। এমনকি স্বর্ণালীর গর্ভাবস্থায় একটি আল্ট্রাসনো রিপোর্টেও নাকি শিশুর সমস্যার বিষয়টি স্পষ্ট ছিল।
তবে সমস্যার বিষয়ে আগে থেকে অবগত থাকলে তারা সিজারিয়ান অপারেশনের আগে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
সূত্র জানায়, আগেও রংধনু ক্লিনিকে ভূল অপারেশনের অভিযোগ রয়েছে।
শিশু মৃত্যুর ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প.প. কর্মকর্তা ডা: নীতিশ চন্দ্র’র মতামত জানতে তার মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি ।
সর্বশেষ ঘটনায় বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্বর্ণালীর পরিবারের পক্ষে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।