১৩ ডিসেম্বর ২০০১, ভারতের কেন্দ্রীয় সংসদ ভবনে চালানো হয়েছিল জঙ্গি হামলা। সপ্তাহখানেক আগে এই দিনটিতেই পার্লামেন্ট ভবন ‘নাড়িয়ে’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুন। আজ ১৩ ডিসেম্বর ভারতের সংসদে সত্যিই ঘটে গেল এক নজিরবিহীন ঘটনা।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভারতের নতুন লোকসভা ভবনের দর্শক সারি থেকে হঠাৎ লাফিয়ে নামেন দুই ব্যক্তি, তারা সংসদ সদস্যদের চেয়ার-ডেস্কের ওপর দাঁড়িয়ে হাতে থাকা ক্যানে চাপ দেন, মুহূর্তেই ক্যান থেকে বেরিয়ে আসে হলদে ধোঁয়া। লোকসভায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। পরে নিরাপত্তারক্ষী ও কয়েকজন সংসদ সদস্য ওই দু’জনকে ধরে ফেলে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, লোকসভা ভবনের বাইরেও একজন নারী ও একজন পুরুষকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকেও ধোঁয়ার ক্যান উদ্ধার করা হয়েছে। বাইরের হামলাকারী দুজনের নাম প্রকাশ করেছে পুলিশ, তাদের একজনের নাম সিন্দে ( ২৫) এবং নিলাম (৪২)। প্রকাশিত এক ভিডিওতে ধোঁয়া-হামলার সময় তাদেরকে ‘স্বৈরাচার সহ্য করা হবে না’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
এমন আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে লোকসভার অধিবেশন বেলা ২ টা পর্যন্ত মুলতবী রাখেন স্পিকার ওম বিরলা। তিনি বলেছেন, ‘ আমরা ঘটনার তদন্ত করছি, ইতিমধ্যে দিল্লি পুলিশও তদন্তে নেমেছে।’
এখন পর্যন্ত যা তথ্য মিলছে তা থেকে দাবি করা হচ্ছে, ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে ছিল স্মোক গ্রেনেড। কী করে তারা তা পেল, এর পিছনে কোনো গোষ্ঠীর হাত আছে কিনা তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। বুুধবারই ভারতীয় সংসদে হামলার ২২ বছর পূর্তি। সেদিনই এই হামলার ফলে দুইয়ের মধ্যে কোনো যোগ আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
আগে থেকেই হামলার হুমকি থাকা এমন দিনে এই ঘটনায় নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় চরম গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, ইউনিয়ন মন্ত্রী হরদিপ সিং পুরিসহ অনেকেই ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, লোকসভা সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আচমকাই এমন হামলায় তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। এমনকী, অজ্ঞাতপরিচয়রা গুলি চালাতে পারে বা বোমা ছুড়তে পারে প্রাথমিকভাবে এমনও আতঙ্ক তৈরি হয় তার মনে। যদিও দুজনকে আটক করা গেছে বলেও জানান তিনি। কী করে লোকসভায় এমন ঘটতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলে নিরাপত্তার গাফিলতির অভিযোগ তোলেন তিনি।
বহুজন সমাজ পার্টির লোকসভা সদস্য দানিশ আলি এনডিটিভিকে বলেন, ‘ লোকসভার ভেতরে হামলা করাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির পর একটি ভিজিটর পাস বা দর্শনার্থী পরিচিতি পাওয়া গেছে, যেটি বিজেপির লোকসভা সদস্য প্রতাপ সিমহার কার্যালয় থেকে ইস্যু করা দেখা গেছে। যেখান থেকেই পাস আনুক না কেন, সংসদ ভবনের ভেতরে ঢুকতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পার করতে হয়।’
তাই কিভাবে তারা সংসদে ধোঁয়ার ক্যান নিয়ে ঢুকলো তা নিয়েই প্রশ্ন জাগছে, বলা হচ্ছে চরম গাফিলতি ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।
খুলনা গেজেট/এমএম