নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সারা দেশে বদলি হওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) একই বিভাগে থাকছেন। গতকাল সোমবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্যের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, একই বিভাগে বদলির ফলে একজন বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে বদলির কাজটি সম্পন্ন করা যাচ্ছে। অন্য বিভাগে বদলি করলে একাধিক কর্মকর্তা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবেন। এতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়ে ঝামেলা বাড়তে পারে। এ জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানা যায়, গতকাল একযোগে ৪৭ জন ইউএনওকে বদলির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে আটটি বিভাগের প্রথম পর্যায়ে ৪৭ জন ইউএনওকে একই বিভাগের মধ্যে বদলি করা হয়েছে।
এ ছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন থানার ৩২৬ জন ওসির সম্ভাব্য তালিকা প্রস্তুত করে একই বিভাগে তাঁদের বদলির তোড়জোড় শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কাজ করছিলেন। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
৪৭ ইউএনওকে বদলিতে অনুমোদন
বদলির আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের আটজন ইউএনওকে একই বিভাগের অন্য উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
একইভাবে ঢাকা বিভাগের ১৩ জন, খুলনা বিভাগের চারজন, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগে ছয়জন করে ১৮ জন এবং বরিশাল ও রংপুর বিভাগে দুজন করে চারজন ইউএনওকে একই বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে আটটি বিভাগের প্রথম পর্যায়ে ৪৭ জন ইউএনওকে প্রস্তাবিত কর্মস্থলে বদলির সম্মতির জন্য অনুরোধ করা হয়। আট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনাররা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর বদলির প্রস্তাব পাঠান। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সেই প্রস্তাব ইসিতে পাঠানো হয়। এরপর ইউএনওদের প্রস্তাবিত কর্মস্থলে বদলির বিষয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশন সম্মতি দিয়েছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনাররা যাচাই-বাছাই করে বদলির তালিকা পাঠিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকার ৪৭ জন ইউএনওর বদলির সুপারিশ এলে কমিশন তাতে অনুমোদন দেয়। আরো অন্তত ৫০ জনের চিঠি এসেছে।
বদলি হবেন ৩৩ ও ৩৪ ব্যাচের দুই শতাধিক কর্মকর্তা
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৪৮৭ জন ইউএনও কর্মরত আছেন। ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ ব্যাচের কর্মকর্তারা এখন দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ৩৫ ব্যাচের প্রায় ১৫০ কর্মকর্তা গত জুন মাসে ইউএনও পদে যোগদান করেছেন। বাকি ৩৩৭ জন ৩৩ ও ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। এর মধ্যে ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ইউএনও পদে প্রথম নিয়োগ করা হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। ৩৩ ব্যাচের কর্মকর্তারা এরও আগে যোগদান করেন। ফলে এখন ৩৩৭ কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত করেছেন। এর মধ্যে ৩৩ ও ৩৪ ব্যাচের ৫০ জনের বেশি কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে ইউএনও পদেই রদবদল করা হয়েছে। ফলে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী আরো দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করা হবে।
৪২৮ থানার ওসির তালিকা
ওসিদের বদলির বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইসির নির্দেশ অনুযায়ী মেট্রোপলিটন (মহানগর) এলাকা বাদে বদলি হওয়ার মতো বিভিন্ন রেঞ্জের অধীন ৪২৮ থানার ওসির তালিকা আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকার থানার ওসির বদলি তথ্য পাওয়ার পর চূড়ান্ত তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সেখানে যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত তালিকা যাবে নির্বাচন কমিশনে।’
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে একই থানায় থাকা ওসিদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সেই তালিকা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৬ জনে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৩৩ জন, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) পাঁচজন এবং রংপুর মহানগর পুলিশের (আরএমপি) পাঁচজন ওসি রয়েছেন। তবে ইসি থেকে ওসি বদলের সময় আরো তিন দিন বাড়ানোর চিঠি ইস্যু হয়েছে। গতকাল ইসির উপসচিব মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এসংক্রান্ত একটি চিঠি জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে পাঠানো হয়।
রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহর ছাড়া পুরো পুলিশ বাহিনীকে আলাদা আলাদা রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি রেঞ্জের দায়িত্বে আছেন একজন ডিআইজি। তিনি তাঁর অধীন জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা। বর্তমানে আটটি প্রশাসনিক বিভাগে আটটি রেঞ্জ এবং রেলওয়ে ও হাইওয়ে পুলিশ নামের দুটি রেঞ্জ আছে। আটটি বিভাগে আটটি পুলিশ রেঞ্জের নাম হলো ঢাকা রেঞ্জ, চট্টগ্রাম রেঞ্জ, খুলনা রেঞ্জ, রাজশাহী রেঞ্জ, সিলেট রেঞ্জ, বরিশাল রেঞ্জ, রংপুর রেঞ্জ ও ময়মনসিংহ রেঞ্জ।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মোজাম্মেল হক বলেন, কেএমপির মধ্যে আটটি থানা রয়েছে। এর মধ্যে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী চার থানার ওসিকে বদলির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
আরএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) মো. রাশেদুল হাসান বলেন, আরএমপিতে ১২টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ছয় থানার ওসি বদলির তালিকায় আছেন। ছয়জনের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
ডিএমপিতে ৫০ থানা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ থানার ওসিকে বদলি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁরা একই থানায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে দায়িত্বে ছিলেন। এর মধ্যে ১৩ থানার ওসি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ঘুরেফিরে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করছেন।
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের সব ইউএনও-ওসিকে বদলি করতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর মধ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী ইউএনও এবং ছয় মাসের বেশি সময় ধরে দায়িত্বে থাকা ওসিদের বদলির বিষয়ে আজ মঙ্গলবারের মধ্যে প্রস্তাব পাঠাতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। তবে ওসিদের সময় আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।