কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান নর-নারীর উপর কুরবানী ওয়াজিব। এটি মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আদম আ. থেকে সকল যুগে কুরবানী ছিল। তবে তা আদায়ের পন্থা এক ছিল না। শরীআতে মুহাম্মাদীর কুরবানী মিল্লাতে ইবরাহীমীর সুন্নত। সেখান থেকেই এসেছে এই কুরবানী। এটি শাআইরে ইসলাম তথা ইসলামের প্রতীকি বিধানাবলির অন্তর্ভুক্ত। কুরবানী একটি স্বতঃসিদ্ধ ওয়াজিব আমল। যা শাআয়েরে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এর মাধ্যমে শাআইরে ইসলামের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
কুরবানি শব্দের অর্থ উৎসর্গ ও নৈকট্য অর্জন। শরিয়তের পরিভাষায় জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে জবেহ যোগ্য উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ছাগল বা ভেড়াকে মহান আল্লাহর অধিক সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে জবাই করাকে কুরবানি বলা হয়।
রসুল সা: নিজেও প্রতি বছর তা আদায় করতেন, হাদীস ও সুন্নাহে উম্মতের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের প্রতি তা আদায়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এর নিয়মনীতি শিক্ষা দিয়েছেন। এমনকি রসুল সা: জীবনের সর্বশেষে বছর নিজে ১০০টি উট কুরবানী করেছিলেন।
প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে ঘনিয়ে আসছে কুরবানি। চাঁদের হিসাব অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই বা ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে এ করবানি। এবারের কুরবানির রূপরেখা কেমন হবে? মহামারির এ সময়ে মানুষের কুরবানির ভাবনা কেমন হওয়া উচিত। এ নিয়ে ইতিমধ্যে চলছে অনেক জল্পনা-কল্পনা। চলছে আলোচনা-টকশো। করোনায় কুরবানি করায় মানুষের করণীয় কী? কুরবানী করবে কি করবে না ইত্যাদি।
কুরবানী না করে অর্থ দান করার প্রস্তাব
এদিকে কলিকাতা রাজ্য থেকে প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকা আনন্দবাজার রাজ্য এতে প্রকাশিত হয়েছে কভিড অতিমারির আবহে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানাচ্ছেন কলকাতা রাজ্যের মুসলিম নেতারা । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইসারত আলি মোল্লা বলেন,এ বছর পশু উৎসর্গ না-করে দয়া করে দুঃস্থের পাশে দাঁড়ান।
কলকাতা রাজ্যের সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী সমিতির সম্পাদক তথা শিক্ষক এস এম শামসুদ্দিন রাজ্যের মুসলিমদের কাছে আবেদন রেখেছেন, “করোনার কথা মাথায় রেখে এ বার দয়া করে পশু কোরবানি দেবেন না। ওই টাকা গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দিবেন।
টালিগঞ্জের টিপু সুলতান মসজিদের কর্ণধার তথা টিপু সুলতানের প্রপৌত্র আনোয়ার আলি শাহ বলেন, “সাধারণ মুসলিমদের কাছে আমাদে আবেদন এই যে এবার,পশু কোরবানি থেকে বিরত থাকুন। ওই টাকা নিজ নিজ এলাকায়
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দান করুন।
আমাদের বাংলাদেশে করোনা মহামারিজনিত অবস্থার প্রেক্ষিতে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, যেহেতু দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ অভাবে আছেন। এমতাবস্থায় কুরবানি না করে তার অর্থ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হোক। এমতাবস্থায় ইসলাম কি বলে আর আমাদের করনীয় কি?
ইসলাম কি বলে ?
কুরবানি ও অভাবগ্রস্তদের সহায়তা- এ দুটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ, দুটি বিষয়েই মানুষের সম্পৃক্ত থাকা উচিত। কুরবানি ইসলামের একটি ওয়াজিব বিধান। যার ওপর কুরবানি ওয়াজিব তাকে অবশ্যই কুরবানি দিতে হবে বা এই বিধান পালন করতেই হবে। কেউ যদি মনে করেন যে, ওয়াজিব কুরবানি বাদ দিয়ে সেই টাকাটা অভাবগ্রস্ত মানুষকে বা কোনো গরিবকে দান করবেন, সেটা মোটেও সঠিক হবে না এবং এটি ইসলামি হুকুম পরিপন্থী হবে। এবিষয়ে খুব শতর্ক করা হয়েছে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫)
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন
فصل لربك وانحر
অর্থ: অতএব আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী আদায় করুন। সুরা কাউসার
যদি কারো উপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে এবং তিনি সেই ওয়াজিব কুরবানি আদায় না করে, টাকা অভাবগ্রস্তদের দান করেন বা গরিবদেরকে দিয়ে দেন, তবে সেই দানের দ্বারা কুরবানি করার দায়িত্ব পালিত হবে না।সে ইবাদত তরক কারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
এই ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
করণীয় হলো-
১. সর্বনিম্ন পরিমাণ অর্থ খরচ করে কুরবানির ওয়াজিব হুকুম আদায় করতে হবে। এর বাইরে যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী অভাবগ্রস্ত বা গরিব মানুষকে সহযোগিতা করবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- কারো অভ্যাস ছিল তিনি প্রতি বছর এক লাখ টাকা মূল্যের গরু কুরবানি করেন, তার উচিত হবে এবার তিনি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কুরবানির ওয়াজিব হুকুম আদায় করবেন এবং বাকি টাকাটা অভাবগ্রস্ত বা গরিবদের দান করে দিবেন। এই দানকে ইসলাম শুধু অনুমোদনই করেননি বরং ভালো এবং উত্তম বলেছে।
২. আর যিনি দুটি বা তিনটি গরু কুরবানী করতেন, তিনি এবার একটি গরু কোরবানি করবেন এবং বাকি টাকা দান করে দিবেন।
৩. আর কারো যদি বেশি টাকা বা বেশি পরিমাণ গরু কুরবানী করার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে তিনি নিজের ওয়াজিব কুরবানী আদায় করবেন।
৪. সামর্থ্য কম থাকা মানুষের ক্ষেত্রেও একই বিধান। মোটকথা হলো, কুরবানীর ওয়াজিব বিধানটি সবাই সর্বনিম্ন যত টাকায় সম্ভব আদায় করবেন এবং বাকি টাকা অভাবগ্রস্ত মানুষকে দান করে দেবেন।
৫. আরো একটি কাজ করা যেতে পারে সেটা হলো- আমরা যারা কুরবানী দেই সবাই তো কুরবানির গোশত বা মাংস দান করি। এবার আমরা কোরবানির গরুর মাংস বা গোশত অভাবগ্রস্ত মানুষের মাঝে বেশি পরিমাণে দান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে পারি’।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই স্বতঃসিদ্ধ ওয়াজিব ইবাদত যথাযথ মর্যাদার সাথে সময়মতো গুরুত্বের সাথে আদায় করার তাওফিক দিক। আমীন।
খুলনা গেজেট/এমএম