আজ শুক্রবার খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বৈঠক রয়েছে। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। আজকের বৈঠকেও তাঁর সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।
সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বেশ কয়েকজন বর্তমান সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন। আমাদের সংসদীয় বোর্ড আজকে দুটি বিভাগ রংপুরে ৩৩টি ও রাজশাহীতে ৩৯টি মিলিয়ে মোট ৭২টি আসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সব আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ফল প্রকাশ করব না। আমরা একসঙ্গে আমাদের মনোনয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করব। শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মনোনয়ন বোর্ডের সভা মুলতবি করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকের বোর্ডে যেসব প্রার্থীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখানে রাজনীতির বাইরে কেউ আসেননি। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে রাজনীতির বাইরে কেউ বিবেচিত হয়েছেন বলে আমার জানা নেই। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আগামী শনিবার প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগে আমরা দেখি কারা বিদ্রোহী হন, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’
তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। জোট হবে বিভিন্নভাবে, কার সঙ্গে কার জোট হবে, কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা মুশকিল। জোট হতেও পারে নির্বাচনের আগে, সময় আছে। কাজেই তালিকাও আসতে পারে।
গতকাল রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে আজ খুলনার প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার কথা। তিন বিভাগে ১০৮টি আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এক হাজার ১২৭টি মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে খুলনা বিভাগে ৪১৬টি, রাজশাহী বিভাগে ৪০৯টি এবং রংপুর বিভাগে ৩০২টি মনোনয়ন ফরম জমা পড়েছে।
রংপুর বিভাগে রয়েছে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে এই বিভাগে আছে ৩৩টি আসন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। জাতীয় পার্টি সাতটি আসনে জয়লাভ করে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপির প্রার্থী শুধু একটি আসনে জয়ী হয়।
গত নির্বাচনে রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে নূরুল ইসলাম সুজন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দিনাজপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে খালেদ মাহমুদ চৌধুরী পান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করা জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ২০০১ সাল থেকে নীলফামারী-২ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়ে আসছেন। ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রংপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন শারমিন চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদের সিপকার হন। গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জয়ী ফজলে রাব্বী মিয়া ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মৃত্যুতে ওই আসনে উপনির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন নির্বাচিত হন।
অন্যদিকে জয়পুরহাট, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী বিভাগে ৩৯টি সংসদীয় আসন রয়েছে। গত নির্বাচনে এসব আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন ৩১ জন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয় দুটি আসনে। চারটি আসনে জয় পায় যুক্তফ্রন্টে থাকা বিএনপি। একটি আসনে জয় পায় বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি। আর একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন।
গত নির্বাচনে রাজশাহী বিভাগ থেকে যাঁরা সংসদ সদস্য হয়েছেন তাঁদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে জয় পাওয়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মোহাম্মদ নাসিম মারা গেছেন। পরে ওই আসনে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে আসেন তাঁর ছেলে তানভীর শাকিল জয়। নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।
রাজশাহী-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শাহরিয়ার আলম। নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদা রয়েছেন খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে। জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নেত্রীর (শেখ হাসিনার) নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। কারা বাদ পড়েছেন, কোন কোন আসনে নতুন মুখ এসেছে আমি জানি না।’