প্রায় চার বছর আগে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা আবু তাহের দাইয়াকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গত সোমবার এ রায় দেন ঢাকার সিএমএম আদালত। পৃথক মামলায় একই আদালত ১০ এবং আট বছর আগে ‘নিখোঁজ’ হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন এবং আমিনুল ইসলাম জাকিরকেও আড়াই বছরের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন গতকাল।
মৃত কিংবা বিদেশে এবং আগে থেকেই কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের আসামি করে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়ে মামলা হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, এসব মামলা গায়েবি। এবার মৃত আসামিকে সাজা দেওয়ার ঘটনা ঘটল। দণ্ডিত আবু তাহের দাইয়া নিউমার্কেট থানার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি মারা গেছেন।
ঢাকা মহানগর ৩৮ (বর্তমান ২৫) নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন। তাঁর বোন সানজিদা ইসলাম তুলি নিখোঁজ নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ‘মায়ের ডাক’ নামে সংগঠন গড়েছেন। এ সংগঠন নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছে। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ডিসেম্বরে সুমনের বাড়িতে গিয়ে ‘মায়ের কান্না’ নামে আরেকটি সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে পড়েন। সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আমার ভাই গুম হওয়ার বিষয়টি সবার জানা। এমন একজনকে সাজা দেওয়া খুব যন্ত্রণাদায়ক।
২০১৫ সালে নিউমার্কেট থানার মামলায় আবু তাহের পুলিশের দেওয়া চার্জশিটে ৫ নম্বর আসামি ছিলেন। এজাহারে ছিলেন ৭ নম্বর আসামি। মৃত্যুর চার বছর পর তাঁকে সাজা দেওয়ার সমালোচনা করে বিএনপি নেতারা বলছেন, গায়েবি মামলার গায়েবি রায় হয়েছে। এতেই প্রমাণিত, বিএনপি নেতাকর্মীকে সাজা দিয়ে যেসব রায় হচ্ছে, তা সাজানো।
আবু তাহেরের ভাই সাইদ গাজী বলেন, তাঁর ভাই বিএনপির রাজনীতি করায় দু’বার কারাগারে যান। ২০২০ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে এলাকা ছাড়েন। ওই বছরের ১৯ জানুয়ারি আশকোনা এলাকায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত ভাইয়ের সাজা হয়েছে জেনে বিস্ময় প্রকাশ করে সাইদ গাজী বলেন, ‘গায়েবি মামলার মতো গায়েবি সাজা হচ্ছে। পুলিশকে বলেন কবর থেকে তাঁকে উঠিয়ে এনে জেল দিক।’
আবু তাহেরের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আয়েশা বেগম বলেন, তাঁর ভাসুরের একটি ছেলে ও ছোট একটি মেয়ে রয়েছে। তাঁর স্ত্রী ফারজানা খাতুনসহ একসঙ্গেই থাকেন। আবু তাহেরের মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পড়েছে তাদের পরিবার। এখন মৃত মানুষের নামেও সাজা হচ্ছে– এটা শুনতেও খারাপ লাগে।
নিউমার্কেট থানা বিএনপির সভাপতি মকবুল হোসেন জানান, আবু তাহের বিএনপির নিবেদিত একজন নেতা ছিলেন। তাঁর জানাজায় কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশীদ (ভিপি হারুন), স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি প্রয়াত শফিউল বারী বাবুসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৫ সালের একটি মামলায় আবু তাহেরকে দুটি পৃথক ধারায় দুই বছর এবং ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের দায়ের করা মামলায় বলা হয়, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেটে বিএনপি নেতাকর্মীরা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় দলটির ১৩ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। পরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে একই বছরের ২১ জুলাই অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০২১ সালের ১৫ মার্চ অভিযোগ গঠন করেন আদালত। পুলিশ সাক্ষী করেছিল ২০ জনকে। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী হাজির করেছে পাঁচজনকে। তারা সবাই পুলিশের সদস্য।
তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জাকির ২০১৫ সালের এপ্রিলে নিখোঁজ হন। বিএনপির দাবি, সুমনের মতো তাঁকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে গুম করেছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৫ সালের মে মাসে তেজগাঁও এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে আগুনের মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সুমন, জাকিরসহ সাতজনকে দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী। একই মামলায় আরেক ধারায় আসামিদের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই মামলায় চার সাক্ষীর দু’জন পুলিশ সদস্য।