খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ মাঘ, ১৪৩১ | ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে রিভিউ শুনানি ৯ ফেব্রুয়ারি
  আজ সকাল থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে রুটিন দায়িত্বে চলবে সরকার ও প্রশাসন

গেজেট ডেস্ক

বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ও আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত নির্বাচনকাল হিসেবে গণ্য হবে। সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারই এই সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। তবে এই সরকারকে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ বলা হবে কি না, সংবিধানে তা বলা নেই। এমনকি এই সময়ে সরকারের আকার সম্পর্কেও কোনো নির্দেশনা নেই।

তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচনী বিধিমালার আলোকে তপশিল ঘোষণার পর থেকেই প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি, পদায়নসহ কিছু কিছু কাজে সরকারকে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সরকারের রুটিন কাজগুলো চালিয়ে নিতে ইসির অনুমতির প্রয়োজন হবে না।

নির্বাচনকালে সরকারের দায়িত্ব ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার  বলেন, ‘সরকার চাইলে যে কোনো কাজকেই রুটিন কাজ হিসেবে চালিয়ে দিতে পারে। সরকার যদি চায় উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো চালিয়ে নিতে হবে, তাহলে তাতে কোনো বাধা থাকবে না। কারণ দেশের উন্নয়ন তো আর থামিয়ে রাখা যাবে না। সুতরাং এটা নির্ভর করবে সরকারের ইচ্ছার ওপর। প্রধানমন্ত্রী চাইলে মন্ত্রিসভার বৈঠক কিংবা একনেক সভাও ডাকতে পারেন। তবে দেখতে হবে, এসব সভা কী উদ্দেশ্যে ডাকা হয়েছে। যদি এমন হয়, মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে সরকার নির্বাচনে সুবিধা আদায়ের পরিকল্পনা করছে তাহলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তপশিল ঘোষণার পর কর্মকর্তাদের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অনুমতির প্রয়োজন হয়। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকরা দায়িত্বে থাকেন। তাদের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলির ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের সম্মতির দরকার পড়বে।’

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সরকার কীভাবে দায়িত্ব চালিয়ে নেবে, তা তারাই জানে। তবে সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কিছু নেই।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তপশিল ঘোষণার পর সরকার প্রধান ইচ্ছা করলে তার মন্ত্রিসভার আকার ছোট বা বড় করতে পারবেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভা কিছুটা ছোট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার মন্ত্রিসভা ছোট করার কোনো আভাস এখনো মেলেনি। ফলে ধরে নেওয়া হচ্ছে এবার বর্তমান মন্ত্রিসভা বহাল রেখেই নির্বাচনে যাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এই সময়ে সরকার রুটিনের বাইরে কোনো কাজ করবে না। অর্থাৎ বড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে হাত দেবে না সরকার।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি বলেছেন, ‘সংবিধানে কোথাও নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলা নেই। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন তার কতজন মন্ত্রী নির্বাচনকালীন সময়ে প্রয়োজন। যদি তার সবার প্রয়োজন থাকে সবাই থাকবেন। আর যদি তিনি মনে করেন তিনি ছোট আকারে করতে পারেন, সেটা তার ইচ্ছা। সংবিধান তাকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে।’

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভা ছোট না করার আভাস দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও কানাডার মতো সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার থাকে, সেভাবে চলবে। অর্থাৎ সে সময় আমরা যারা থাকব, আমরাই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে আমাদের রুটিন ওয়ার্ক দায়িত্ব পালন, দৈনন্দিন কাজকর্ম করব, যাতে সরকার অচল হয়ে না যায়, সেটা আমরা করব, সেভাবে চলবে।’

২০১৮ সালের নভেম্বরে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগের দিন টেকনোক্র্যাট চার মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলা হয় এবং তারা পদত্যাগপত্র জমাও দেন। বাকি মন্ত্রীরা সবাই রুটিন কাজ করে গেছেন। এর আগে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের আগের সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হয়। তখন কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে নতুন করে ছয়জনকে যুক্ত করা হয়েছিল।

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নির্বাচন কারও অধীনে অনুষ্ঠানের কথা সংবিধানে নেই। নির্বাচনের সময় সরকারের ধরন পরিবর্তন হবে—এমন বিধানও নেই। সংবিধান অনুযায়ী, দেশে সব ধরনের নির্বাচন পরিচালনা করে ইসি। সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় কর্মচারী নিযুক্ত করবেন। সরকারের নির্বাহী বিভাগ ইসিকে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে। সুতরাং সংবিধানের আলোকে সরকারের কাজ ইসিকে সহযোগিতা করা ও নির্বাচনকালে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইসির পরামর্শ নেওয়া।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচনী বিধিমালায় বলা আছে, ‘তপশিল ঘোষণার পর প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়নসহ কিছু কিছু কাজে সরকারকে কমিশনের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে—এমন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন, নির্বাচনের সময় সরকারি প্রটোকল গ্রহণ, ডাকবাংলোসহ সরকারি স্থাপনার ব্যবহার বা এ জাতীয় কিছু কর্মকাণ্ডে বিধিনিষেধ আরোপ থাকে। সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে গেলেও সরকারের ওপর তার প্রভাব পড়বে না। সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনোকিছুই অযোগ্য করিবে না।’




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!