বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলাকালে নিয়ম ভঙ্গ করে কলেজ মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলা সদরের সরকারি সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল (এসএম) কলেজের মাঠে ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সুফলভোগীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ শিরোনামে এই সমাবেশের আয়োজন করে উপজেলা পরিষদ। পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী, এদিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনার বিভাগের পরীক্ষা ছিল। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বেলা ১টায় পরীক্ষায় বসে শিক্ষার্থীরা। আর শেষ হয় বিকেল ৫টায়। কিন্তু পরীক্ষার মধ্যেই বিকেল ৩টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুবিধাভোগীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসএম কলেজ মাঠে আসতে থাকেন। বাঁজতে থাকে উচ্চ শব্দে মাইক, চলে স্লোগান। বেলা সাড়ে ৩টার মধ্যে নেতাকর্মী ও সুবিধাভোগীদের উপস্থিতে মাঠের সভামঞ্চের সামনের চেয়ারগুলো পরিপূর্ণ হয়ে যায়। পুলিশ উপস্থিতির মাঝে স্লোগান দিয়ে ছোট ছোট দল নিয়ে লোকজন আসতে থাকেন মাঠে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আমিরুল আলম মিলন। তবে ওই ব্যনারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস. এম. তারেক সুলতানের নাম উল্লেখ থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক মোজামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সভামঞ্চে এমপি ছাড়াও মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এমদাদুল হক, মোরেলগঞ্জ পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল হক তালুকদারসহ জেলা, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দেখা গেছে।
পরীক্ষা বিধিমালা ভঙ্গ করে উচ্চশব্দে মাইক বাজিয়ে সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও তারেক সুলতান বলেন, ‘আমি ওই ভাবে জানিনা। ব্যানারে আমার নাম থাকার কথা না। কারা ব্যানার বানিয়েছে জানি না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে মাইক বন্ধ করার বিষয়ে বলা হয়েছে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ওখানে সভাপতিত্ব করছেন। পরীক্ষা শেষ হবার পর অনুষ্ঠান করার জন্য বলা হয়েছে।
তবে উচ্চ শব্দেই অনুষ্ঠান চলমান থাকায় বেলা ৩টা ৫৭ মিনিটে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা: খালিদ হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখছেন। বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘কলেজ অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে তিনি পরীক্ষার বিষয়টি কেন আগে জানান নি। মাইক বন্ধ করা হয়েছে। পরীক্ষাটি ভবনের কোনের একটি কক্ষে নেওয়া হচ্ছে এবং ওই এলাকায় কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
তবে পরীক্ষা কেন্দ্রের মাঠে তখনও মাইক বন্ধ হয়নি জানালে, জেলা প্রশাসক মাইক বন্ধ হয়েছে দাবি করে আবারও খোঁজ নিতে বলেন।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সরকারের যত উপকারভোগী সবাইকে নিয়ে এই আয়োজন ছিল। এতে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৫ হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষার কারণে অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে শেষের দিকে সাইন্ড লেস করে দুই তিনজনের বক্তব্য দিয়ে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার কোন সমস্যা হয়নি। পরীক্ষার হল ছিল মঞ্চ থেকে অনেক দূরে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী, পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্যকোন ব্যক্তি যেন কেন্দ্র প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে না পারেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে।’ বিধিমালার ১৯ নং ধারায় উল্লেখ, জেলা প্রশাসক সকল পরীক্ষা কেন্দ্রে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা বিধান করবেন। পরীক্ষা পরিচালনার সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট জেলা সদরের বাইরে অবস্থিত পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে তাঁর প্রতিনিধি (অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মর্যাদাসম্পন্ন) নিয়োগ করতে পারবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে ওই কলেজের এক শিক্ষক বলেন, সমাবেশ তো চলছে, মাইকও বাঁজছে- ভেতরে পরীক্ষাও হচ্ছে। আসলে এমন তো হওয়ার কথা না। দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষকতা ও পরীক্ষার সাথে জড়িত। এমন কখনও দেখিনি। এক পাশে পরীক্ষা চলছে, মাঠে মাইক বাজিয়ে শত শত লোক নিয়ে সমাবেশ – এ কি কখনও হয়? কিভাবে কী সম্ভব আমি ঠিক জানিনা, স্যার হয়তো বলতে পারবেন।’
বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে এসএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমানের সাথে কথা হয় মুঠোফোনে। পাশ থেকে ভেসে আসছিল মাইকের প্রচন্ড শব্দ। পরীক্ষা কেন্দ্রের মাঠে সমাবেশ হতে পারে কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ হাফিজুর বলেন, ‘এটা আমরা বলতে পারবো না। আমাদের প্রোগ্রাম (পরীক্ষার সময়সূচি) সব জায়গা দেওয়া আছে। এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাইনা।’
অনুষ্ঠানের আয়োজক করা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জানিনা, কারা কী করেছে কোন মন্তব্য নেই। আমরা পরীক্ষা ম্যানেজ করছি। আমাদের কোন সমস্য হয়নি।’
পরীক্ষা শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কেন্দ্রের দুজন পরীক্ষার্থী বলেন, ‘এত শব্দের মাঝে কখনো পরীক্ষা দেই নি। হলের পাশেরই বড় মাইকের আওয়াজে মনোযোগ নষ্ট হয়। এমন পরিবেশে পরীক্ষা যন্ত্রনার।’
খুলনা গেজেট/ এএজে