বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে বিরোধী নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, দমনপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। শনিবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ আহ্বান জানানো হয়।
সোমবার বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) অনুষ্ঠিত হবে। অ্যামনেস্টির দাবি, এই রিভিউ এমন সময় হচ্ছে, যখন বাংলাদেশে দমনপীড়ন চলছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা-মামলার কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। অ্যামনেস্টির প্রত্যাশা, জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশ সরকারের কাছে জবাবদিহির দাবি জানাবে।
অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক পরিচালক লিভিয়া স্যাকার্ডি বলেন, জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর উচিত বাংলাদেশের অতীতের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট ও উপযুক্ত সুপারিশ তুলে ধরা। নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিরোধী নেতাকর্মী, গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজ সরকারের পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউপিআর চার বছরে একবার হয়। এতে সব সদস্য রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। সেক্ষেত্রে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের জমা দেওয়া তথ্য পর্যালোচনায় গুরুত্ব পায়। সংশ্লিষ্ট দেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের অধিকার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, মৃত্যুদণ্ড কিংবা শরণার্থীদের অধিকারের কী অবস্থা, তা পর্যালোচনা করা হয়। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশ এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। ২০২৩ সালে আইনটি সাইবার নিরাপত্তা নামে করা হলেও আগের কঠোর বিধিগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে ভিন্নমত দমনে আইনটি ব্যবহার না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। অ্যামনেস্টির দাবি, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ২০১৮ সালে মাদকবিরোধী অভিযানের আড়ালে ৪৬৬ জনকে হত্যা করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ বিক্ষোভ দমন অব্যাহত রেখেছে। বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট, লাঠিসোটা, সাউন্ড গ্রেনেড এবং জলকামান ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনাও তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যাদের নির্বিচারে আটক করা হয়েছে, তাদের মুক্তি দাবি করেছে সংস্থাটি।