পুনেতে গতকাল ঈদের আগের ছুটি শুরুর মতো অবস্থা। দিওয়ালির উৎসব শুরু রোববার, তার আগে গতকালই শেষ অফিস করে অনেকে শহর ছেড়েছেন। সন্ধ্যা থেকেই মূল শহরের রাস্তাগুলোতে বাড়িফেরা মানুষের সারি। সেই সারিতে একটি মুখ বোধ হয় বাংলাদেশ দলেরও খুব চেনা। অ্যালান ডোনাল্ড, বাংলাদেশ দলের এই বোলিং কোচ কাল অনুশীলনের পর টিম মিটিংয়ে সবার সামনেই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনিও বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আর থাকছেন না তিনি। মাঠ থেকে এর পর বাংলাদেশ দলের বাসও পুনের জ্যামে পড়েছিল, হয়তো জানালার পাশে বসে ডোনাল্ডও দেখছিলেন সেই ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়! এমনিতে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁর চুক্তি ছিল বিসিবির সঙ্গে। বিশ্বকাপ শুরুর পর দলের একের পর এক ব্যর্থতার জন্য কোচিং স্টাফদের যে কয়েকজনের ওপর বিসিবি অসন্তুষ্ট হয়েছে, তাদের মধ্যে ডোনাল্ড একজন। স্কোয়াডে পাঁচ পেসার নেওয়ার পক্ষে ডোনাল্ডেরই সুপারিশ ছিল, যা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
তার পর থেকেই বিসিবি তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাড়াতে আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু ঘটনাটি তারও কয়েক দিন পর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দল জিতলেও মানসিক শান্তিতে ছিলেন না ডোনাল্ড। ম্যাথুসের ওই ‘টাইমড আউট’ নিয়ে তিনি অখুশি ছিলেন এবং সাকিব ও বাংলাদেশ দলের এমন পরিস্থিতির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার একটি ওয়েব পোর্টালে জ্বালাময়ী সাক্ষাৎকারও দেন। তার পরই বিসিবি থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখানো হয় তাঁকে। মৌখিকভাবে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়– কেন তিনি এমন সাক্ষাৎকার দিলেন?
তাই কাল পুনেতে টিম মিটিংয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়া এই বলে– বিশ্বকাপের পর আর দলের সঙ্গে থাকছেন না তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সামনের ম্যাচটি পর্যন্তই থাকছেন তিনি। কিন্তু ড্রেসিংরুমের এই খবর মিডিয়ায় ফাঁস হয়ে যাওয়াতে তিনি নাকি অবাক এবং কষ্টও পেয়েছেন। কেননা তাঁর ধারণা ছিল, তাঁর এই পদত্যাগের ঘোষণা কেবল ড্রেসিংরুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ডোনাল্ডের পদত্যাগের খবর ঢাকা থেকে বিসিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। ২০২২ সালের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এই স্বনামধন্য কোচকে। এর পর তাঁর পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হয়ে এই বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেছিল বিসিবি।
ডোনাল্ডের এই পদত্যাগের ঘোষণার আগে বিকেলটা বেশ ভালোই কাটছিল পুনের মাঠে। মুম্বাই থেকে সড়কপথে পুনেতে আসতে আসতে প্রায় তিন ঘণ্টা, ততক্ষণে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন প্রায় শেষ। অবশ্য লিটন যে এই সেশনে থাকতে পারবেন না, তা আগেই জানা ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের। এদিন বরং ঢাকা থেকে আসা ক্যামেরার চোখ ছিল এনামুল হক বিজয়ের দিকে। এদিন মাঠে এসে দলের সঙ্গে স্ট্রেচিং করার পর প্যাড পরে বসেছিলেন কিছুক্ষণ। দ্বিতীয় ব্যাচে স্পিনারদের নেটে প্রথম অনুশীলনের সুযোগ মেলে তাঁর। বিজয়ের কাছে এদিন বিশ্বকাপের শুরু মনে হলেও গতকাল একটা শেষের সুর লেগেছিল পুরো সেশনে। দেড় মাস ধরে চলা একটা মিশনের একেবারে শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শনিবারের ম্যাচে এনামুল হক বিজয়কে ওপেনিংয়ে নামাতে আলোচনা হয়েছে টিম মিটিংয়ে। কিন্তু কার জায়গায় তাঁকে খেলানো হবে? তানজিদ হাসান তামিম নাকি লিটন কুমার দাস? শোনা খবর, লিটন দাসকে টপঅর্ডার থেকে মিডল অর্ডারে নামানোর একটা প্রস্তাব উঠেছে।
খুলনা গেজেট/এনএম