বিএনপির ঢাকা মহাসমাবেশ (২৮ অক্টোবর) থেকে এক সপ্তাহে খুলনা বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ১৫টি মামলা ও দেড় শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এরমধ্যে কেএমপিতে নতুন ৩টি ও জেলায় নতুন ১২টি মামলা করেছে পুলিশ। দলটির অভিযোগ, এজাহার নামীয় আসামী না হলেও গ্রেপ্তার করে অজ্ঞাত আসামী হিসেবে বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত মামলায় আদালতে প্রেরণ করছে পুলিশ।
ইতিমধ্যে খুলনা জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কাজী মাহমুদ আলী, দাকোপ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল মান্নান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি দেড় শাতাধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
দলীয় সুত্রের দাবি ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলা ও মহানগরের ৭৫জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ২০২১ ও ২২ সালের বিভিন্ন মামলায়। অবরোধের সময় ৬৫জনকে নতুন মামলায় আদালতে প্রেরণ করেছে। নতুন দায়েরকৃত ১৫ মামলার সবগুলোই বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা হয়েছে। জেলার ফুলতলায় ১, দিঘলিয়ায় ১, বটিয়াঘাটায় ১, তেরোখাদায় ১, পাইকগাছায় ১, কয়রায় ১, রূপসায় ২, দাকোপ ২ ও ডুমুরিয়ায় ২চি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া মহানগরীর খুলনা সদর থানায় ১টি, সোনাডাঙ্গা থানায় ১টি ও আড়ংঘাটা থানা ১টি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে।
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খানকে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়েছে বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা এলাকা।
বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত কবির গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, বুধবার বটিয়াঘাটা থানায় হওয়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার জলমা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া গত ৩১ অক্টোবর খুলনা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খালিদ উদ্দীন বাদী হয়ে ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলাতেও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খানকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া একই দিন নগরের সোনাডাঙ্গা থানার এসআই নিয়াজ মোরশেদ বাদী হয়ে ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি একটি মামলা করেন। ওই মামলাতেও আমীর এজাজ খানকে আসামি করা হয়েছে।
খুলনা মহানগরীর তিন থানায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়েরকৃত ৩ মামলায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড, শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পিসহ মোট আসামি করা হয়েছে ১২৮৭ জনকে। সর্বশেষ, বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) রাতে মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনাকে গ্রেপ্তারের নামে তার শশুর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
মনার স্ত্রী জানান, রাতে পুলিশ ওই বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে এবং বাড়িতে তল্লাশির নামে বাড়ির লোকজনদের অসৌজন্যমুল আচরণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) তেরখাদা থানায় দায়ের করা একটি মামলা করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত।
তেরখাদা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফখরুল ইসলাম বাবু বলেন, মামলায় আমার বাবাকে আসামি করা হয়েছে, তিনি ১১ বছর আগে মারা গেছেন। আমাকে ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ২ নভেম্বর তেরখাদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) চঞ্চল কুমার হালদার বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি গ্রহণ করেন। মামলায় মোট ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো দেড়শ থেকে ২০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
খুলনা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল মান্নান মিস্ত্রীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। মান্নানের ভাগ্নি মুন্নি খাতুন জানান, বুধবার (১ নভেম্বর) বিকেলে সাদা পোশাকের ৮ জন নিরালা এলাকায় মান্নানের ভাড়া বাসায় প্রবেশ করে। তাদের সবার কাছে অস্ত্র ছিল।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল-মামুন বলেন, আব্দুল মান্নান মিস্ত্রীকে আটক বা আটকের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। খুলনা পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার বিএম নুরুজ্জামানও একই কথা জানিয়েছেন।
খুলনা বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলসহ খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) খুলনা সদর থানায় এসআই খালিদ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় মোট ৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
খুলনা সদর থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে।
অপরদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান, সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহিরসহ বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সোনাডাঙ্গা থানার এসআই নিয়াজ মোর্শেদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, সরকার সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর বলপ্রয়োগ করে চলমান অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। এখন নতুন করে মামলা করছে। যে কোনো উপায়ে অবরোধ চলবে বলে জানান তিনি।
এদিকে খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনাকে গ্রেপ্তার অভিযানের নামে পুলিশ লাইন এলাকায় পুলিশ কর্তৃক তার শশুর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) প্রদত্ত বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, চলমান গনতান্ত্রিক আন্দোলনে অতিউৎসাহী কিছু সংখ্যাক পুলিশ সদস্য বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক গায়েবী মামলা দায়ের করে নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গ্রেফতার অভিযানের নামে হয়রানী করছে যা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে নগরীর পুলিশ লাইন এলাকায় মহানগর বিএনপির আহবায়কের শশুর বাড়ির দরজা ভেঙ্গে পুলিশের তান্ডব চালিয়েছে। পুলিশের এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড থেকে পুলিশ সদস্যদের ভবিষতে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিদাতারা হলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আবু হোসেন বাবু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পি প্রমূখ।
খুলনা গেজেট/কেডি