সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মুখোমুখি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। উত্তপ্ত রাজনীতি। উদ্যোগ নেই সংলাপের। দৃশ্যমান মধ্যস্থতাকারীও নেই। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। পাল্টা শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংঘাত ও সহিংসতার শঙ্কা জনমনে। সবারই প্রশ্ন কি হবে ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে এবার ‘বিজয়’ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছে বিএনপি। আন্দোলন সফল করতে যেসব কর্মসূচি বা কৌশল নেওয়া প্রয়োজন, তার সবই করবে দলটি। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে কঠোর কর্মসূচির বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন নেতারা। ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে সরকারের ভূমিকা এবং উপস্থিত জনতার মনোভাব দেখেই পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেবে বিএনপি। মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে হলে ৩০ কিংবা ৩১ অক্টোবর রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা করে ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে। আবার সচিবালয়ের কর্মসূচিতে বাধা দিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলে সেখানেই অবস্থান কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে দলটির। একই সঙ্গে ঢাকাসহ সারাদেশে রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর।
এ ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি আমরা। আন্দোলনের বিভিন্ন ধাপ সফলভাবে পেরিয়ে এখন শেষ পর্যায়ে। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া স্বৈরশাসককে ক্ষমতা থেকে সরাতে আজ সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। আন্দোলনে মানুষের অংশগ্রহণ ও দেশপ্রেম দেখে আমরা অভিভূত। তবে সরকার জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারছে না। আমরা আশা করছি, জনগণের আন্দোলনে সাড়া দিয়ে সরকার অবিলম্বে পদত্যাগ করবে। অন্যথায় সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে যত কঠোর কর্মসূচি দেওয়া প্রয়োজন, তার সবই দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার নির্বাচনে বিরোধী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কাজে লাগাতেই আনসার বাহিনীকেও আটকের ক্ষমতা দিয়ে সংসদে বিল তুলেছে।
ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে বিএনপি এ কর্মসূচি ঘিরে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাজধানী অচল কিংবা লাগাতার অবস্থানে গেলে তাৎক্ষণিক পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।
জানা গেছে, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ২৮ অক্টোবর সমাবেশের পাশাপাশি রাজধানীর চার প্রবেশমুখে সকাল থেকেই পাহারা বসাবে আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে ঢাকার ২০টি নির্বাচনী এলাকায় দিনভর সতর্ক অবস্থায় থাকবেন দলের স্থানীয় নেতাকর্মী। এসব কর্মসূচি গুছিয়ে আনতে বুধবার বৈঠকে বসছেন মন্ত্রীসহ ঢাকার দুই মেয়র ও ১৭ এমপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এ বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সব সময়ই আওয়ামী লীগ সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ অশান্তি করলে সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, কোথাও দাঁড়াতেই পারত না বিএনপি। তবে ২৮ অক্টোবর ঘিরে অশান্তি, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা করতে এলে বিএনপিকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
অবশ্য ২৮ অক্টোবর দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেছেন, সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কা থাকলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগে। এ ক্ষেত্রে রাজধানীর চার প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, গাবতলী ও আবদুল্লাহপুর এলাকায় সতর্ক পাহারায় থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবেন স্থানীয় নেতাকর্মী। সেই সঙ্গে ঢাকার ২০টি নির্বাচনী এলাকায় সকাল থেকে সতর্ক অবস্থান নেওয়া হবে।
ঢাকায় আওয়ামী লীগের এমপি ১৭ জন। তারা নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রস্তুত রাখার দায়িত্ব পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন। ঢাকার অন্য তিন এমপি বিরোধী দলের। ওই তিন নির্বাচনী এলাকায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন স্থানীয় থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।