পুরো ফিলিস্তিন রক্তাক্ত। নির্বিচার বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরায়েল। নবজাতক, হামাগুড়ি দেওয়া শিশু, স্কুলপড়ুয়া শিশু, অশীতিপর নরনারী কেউ বাদ যাচ্ছে না। গাজার বাতাসে লাশের গন্ধ আরও তীব্র হচ্ছে। ভেঙে পড়েছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। ঘরবাড়ি, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া মানুষ উদ্ধার করার তৎপরতাও ক্রমেই কমে আসছে। যেখানে জীবন হাতের মুঠোয়, সেখানে কে কাকে উদ্ধার করতে যাবে! অসহায়, নিরস্ত্র, বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা শুধু মরছে প্রতিরোধহীন ইসরায়েলি হামলায়।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৭০৪ জন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৯১ এবং আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৫৭। ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে নিহতের সংখ্যা ৯৬ এবং আহত ১ হাজার ৮২৮। আহতদের অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে।
শুধু মানুষই হতাহত হয়নি, ধুলোর সঙ্গে মিশে গেছে অনেক ঘরবাড়ি, এমনকি হাসপাতালও। গাজা সিটির আল-ওয়াফা হাসপাতালটি বোমার আঘাতে খান খান হয়ে গেছে। সেখানে চিকিৎসাধীন ও আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদের অনেকে নিহত হয়েছে। তার মধ্যে ১৭ দিন গাজায় নেই বিদ্যুৎ বা জ্বালানি। ওষুধও শেষ। চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়ার মতো কোনো উপায়ও নেই। ফলে মৃত্যুই যেন ফিলিস্তিনিদের জন্য এখন অনিবার্য পরিণতি হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় অদ্ভূত নীরবতা পালন করছেন বিশ্বনেতারা। কারও যেন কিছু করার নেই।
ইসরায়েলের এই নির্বিচার হত্যাযজ্ঞকে পরিষ্কার ‘গণহত্যা’ বলে বর্ণনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এই গণহত্যা বন্ধে দেশে দেশে বিক্ষোভ হলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার যুদ্ধ মন্ত্রিসভা যেন বধির হয়ে গেছে। কারও আকুতি তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে না। উপরন্তু ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলে এই বর্বরতায় উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। গতকাল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ তেলআবিবে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দুজনকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে। ফিলিস্তিনি শিশুদের গণহত্যার মধ্যে এই হাসি বিশ্বকে অবাক করে দেয়।
‘গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে’
ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা গতকাল গাজা সিটিতে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গাজা উপত্যকায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ইসরায়েলের হামলার কারণে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৬৫ চিকিৎসক নিহত হয়েছেন এবং ২৫টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১২টি হাসপাতাল এবং ৩২টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। আশঙ্কা করছি, জ্বালানির অভাবে আগামী কয়েক ঘণ্টায় আরও অনেক হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
পশ্চিমা ‘নীরবতা’ গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে : এরদোয়ান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে ফোনে কথা বলেছেন। এ সময় তারা পশ্চিমা দেশগুলোর নীরবতার নিন্দা করেন। এরদোয়ান বলেন, পশ্চিমা নীরবতা গাজায় মানবিক সংকট আরও বাড়িয়েছে। এরদোয়ান পুতিনকে বলেছেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের প্রতি ‘বর্বরতা’ আরও গভীর হচ্ছে, কারণ বেসামরিক মানুষ ক্রমাগত নিহত হচ্ছে। আগামী শনিবার তুরস্কে ‘মহান প্যালেস্টাইন সমাবেশ’ হবে, যেখানে এরদোয়ান যোগ দেবেন।
ইসরায়েলের হত্যার বিনামূল্যে লাইসেন্স থাকা উচিত নয় : কাতার
গাজায় নির্বিচার হামলা বন্ধে ইসরায়েলকে সংযত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কাতারের আমির। শুরা কাউন্সিলের বার্ষিক অধিবেশনে উদ্বোধনী বক্তৃতায় আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, সংঘাতের বিপজ্জনক প্রসার এই অঞ্চলের জন্য হুমকিস্বরূপ। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলছি যথেষ্ট হয়েছে। ইসরায়েলকে হত্যার নিঃশর্ত গ্রিন লাইট ও হত্যার বিনামূল্যে লাইসেন্স দেওয়া কারও কাজ নয়। দখলদারিত্ব, অবরোধ ও বসতি স্থাপনের বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে সবকিছু চালিয়ে যাওয়া সমর্থনযোগ্য নয়।’ ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরব থাকায় এর নিন্দা করে বলেন, এমন আচরণ মুখবিহীন বা নামহীনতার পরিচয়।
খুলনা গেজেট/এইচ