খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ মাঘ, ১৪৩১ | ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  মারা গেলেন কাজী নজরুল ইসলামের নাতি বাবুল
  রাজনৈতিক দলগুলো কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন : প্রেস সচিব

ঘূর্ণিঝড় আতংক শেষে উপকূলে স্বস্তির সকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ যে খুব শক্তিশালী হবে না, তা আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন আবহাওয়াবিদরা। গত সোমবার থেকে সেভাবেই উপকূলের দিকে এগুচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ গতকাল দুপুরে হামুন শক্তি সঞ্চয় করে। প্রবল শক্তি নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়টি– এমন ঘোষণায় চারদিকে ছিল থমথমে অবস্থা। অজানা শঙ্কা বয়ে যায় উপকূলজুড়ে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়েন লাখ লাখ মানুষ।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৭ নম্বর, কক্সবাজার বন্দরকে ৬ নম্বর এবং মোংলাকে ৫ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়। দেশের সবক’টি উপকূলীয় জেলার নদীবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখানো হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশে নৌপথে সব নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বাতিল করা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সরকারি ছুটি। কক্সবাজার বিমানবন্দরে নেওয়া হয় বাড়তি সতর্কতা।

ঝুঁকিপূর্ণ ১০ জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকরা গ্রামে গ্রামে মাইকে সংকেত প্রচার ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে গেছেন, আবার বেশির ভাগই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এভাবে আতঙ্কের মধ্য দিয়েই গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এ সময় ঝড়বৃষ্টি ছাড়া বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ফলে দিনভর ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক কেটে গিয়ে উপকূলজুড়ে নেমে আসে কিছুটা স্বস্তি। রাত সাড়ে ৮টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়টি প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে কিছুটা দুর্বল হয়ে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলজুড়ে ভারী বৃষ্টি ও ঝড় বয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলে ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে গতকাল সকাল থেকে বরিশালসহ এই অঞ্চলের সর্বত্র থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়া। পুরো উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করেছে। রাত থেকে কখনও হালকা বৃষ্টি, আবার কখনও ভারী বৃষ্টির সঙ্গে থেমে থেমে দমকা বাতাস বয়ে গেছে। কুয়াকাটা-সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর জোয়ারের সময় কিছুটা উত্তাল ছিল। ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়।

বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মঙ্গলবারের সকালটা শুরু হয় হতাশা দিয়ে। প্রত্যুষে ঘুম থেকে জেগে দেখা পান বৃষ্টির। ঘরের বাইরে যাওয়ার পরিবেশ ছিল না। ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে ছুটির দিনটি এভাবেই যাবে– এমনটাই নিশ্চিত ছিলেন সবাই। ধারণা পাল্টে দিয়ে ৯টার পরেই বৃষ্টি থেমে যায়। তবে গুমোট আবহাওয়া ছিল সারাদিন। সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘূর্ণিঝড় সতর্ক সংকেত বাড়তে থাকায় উদ্বেগ ছিল সর্বত্র। তবে নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়া ছাড়া হামুনের আর কোনো প্রভাব ছিল না দক্ষিণাঞ্চলে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সোমাবার বিকেল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জরুরি সভা করে কলাপাড়া উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। ৩ হাজার ১৬০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া বন্দরের হলতা নদীর মোহনায় ঐতিহ্যবাহী দশোহরা উৎসব দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এ বছর আর পালিত হচ্ছে না।

সন্ধ্যায় দমকা হাওয়া শুরু হলে ও উপকূল উত্তাল হয়ে পড়লে সতর্কতার অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়েছে কক্সবাজারে। সন্ধ্যা থেকে অন্ধকার হয়ে পড়ে পর্যটন নগরী। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে কক্সবাজার শহরের পাশাপাশি জেলার অনেক অংশে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার কথা জানান জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী গোলাম আহম্মদ। চট্টগ্রামে দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেটিতে সীমিত আকারে জাহাজ থেকে মালপত্র খালাস হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে সন্দ্বীপ যাতায়াতের পাঁচটি ফেরি ও নৌ-ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে সন্দ্বীপের সঙ্গে চট্টগ্রামের যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

খুলনায় প্রস্তুত রাখা হয় ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। উপজেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষ থেকে বিকেলে মাইকিং, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে দুটি করে লাল পতাকা উত্তোলন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত সব মিলিয়ে সাড়ে ১২ হাজারের মতো মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এর আগের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ ও ‘আইলা’র সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় হামুনের বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। আগের ঘূর্ণিঝড়গুলো বাংলাদেশের উপকূল থেকে গড়ে এক হাজার কিলোমিটার দূরে সৃষ্টি হয়। পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে শক্তি অর্জন করতে করতে তা উপকূলের দিকে আসে। ফলে সেগুলোর শক্তি ও বাতাসের গতি ছিল বেশি। তবে হামুন বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৬০০ কিলোমিটারের মতো দূরে সৃষ্টি হয়েছে। এটি দ্রুত (ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার) উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। ফলে এই ঘূর্ণিঝড় তীব্র শক্তি অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়নি। এ ছাড়া একই সময়ে আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘তেজ’-এর কারণেও হামুন কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। পূর্ণিমা রাতের পাঁচ দিন আগে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও কেটে গেছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!