বিএনপি সংখ্যালঘুতায় বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা হাজার বছর ধরে দুর্গোৎসব পালন করছে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু মানুষ সেটা বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম সবাই একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। আমাদের একটিই লক্ষ্য ছিল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার জাতীয়তাবাদী দর্শনেও বলা হয়েছে, এই বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের বা বর্ণের নয়। বরং এ দেশে বসবাসরত সবারই। সেজন্য আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও বলেছেন, আমি সংখ্যালঘুতায় বিশ্বাস করি না। এখানে যারা বাস করেন সবাই বাংলাদেশি।
কেউ সংখ্যা কম হতে পারেন কিন্তু অধিকার সবার সমান। আমাদের সংবিধানেও এ কথাগুলোই বলা আছে। বিএনপি সেটাকে চর্চা করে ও লালন করে।
শনিবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
এ সময় বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মো. আব্দুস সালাম, রমেশ চন্দ্র সেন, তরুণ দে, জয়দেব জয়, মিল্টন বৈদ্য, অমলেন্দু দাস অপু, অপূর্ব হালদার অপু, মৃণাল বৈদ্য, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির মনিন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন আজ ধুলোয় মিশে গেছে। মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। এজন্য আমাদের আজ লড়াই করতে হচ্ছে। বিএনপি শুধু অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে তা নয়। আমরা অন্যান্য ধর্মের অধিকারও রক্ষা করি। আমরাই প্রথম সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময় মন্দিরের জমি উদ্ধারের উদ্যোগ নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসব ঘটনায় যারা জড়িত তারা সবাই সরকারি দলের সঙ্গে জড়িত। এ কথাটা রাণা দাশগুপ্ত বলেছেন। তিনি বলেছেন, সরকার চাইলে পূজা শান্তিপূর্ণ হবে নচেৎ নয়।
তিনি বলেন, আমি বলব- এ দেশে ধর্ম নিয়ে যাতে কোনো বাড়াবাড়ি না হয়। যাতে কোনো সংঘাত ও সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি না হয়। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে গণতন্ত্র থাকলে সবারই অধিকার পাওয়ার সুযোগ থাকে। আমরা সেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেশের যে সংকট সেটা কিন্তু শুধু বিএনপির বা ব্যক্তির নয়। এই সংকট পুরো জাতির। মুসলমানদের ঈদ বলেন আর হিন্দুদের পুজা বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব ও রাষ্ট্র কিন্তু সবার। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এই ধর্মীয় মূল্যবোধকে বিশ্বাস করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, দেশে রাজনীতি বিভক্ত করা হয়েছে। মানুষের মুক্তিতেই বাংলাদেশের মুক্তি। আসুন আমরা যেন উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারি।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের সময় আসলে কেন গোলোযোগ সৃষ্টি হয়? কেন ৫২ বছরেও আমাদের ভোটের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হয়? কিন্তু এই শাসকগোষ্ঠী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে সবার মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের ৩১ দফায় বলা আছে- সব ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। সব দল-মতের সমন্বয়ে রেইনবো নেশন তৈরি করব। আসুন হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে একটি শান্তিময় বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
খুলনা গেজেট/কেডি