খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ মাঘ, ১৪৩১ | ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  মারা গেলেন কাজী নজরুল ইসলামের নাতি বাবুল
  রাজনৈতিক দলগুলো কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন : প্রেস সচিব

আজ বিদায় নিচ্ছে মৌসুমি বায়ু, আসছে ‘উষ্ণ’ শীতকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের আমেজ ও নদী অববাহিকায় কুয়াশার দাপট শুরু হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে কুয়াশার কারণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামাও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।  রবিবারের মধ্যে বর্ষার মৌসুমি বায়ু বিদায় নিচ্ছে, এখন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে হিমালয়ের শীতল বাতাস আসতে শুরু করবে। এবার যথাসময়ে শীতের আবহ শুরু হলেও তীব্র হবে না, হবে উষ্ণ শীতকাল। এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

অনেক বছর পর এবার যথাসময়ে বর্ষার মৌসুমি বায়ু বিদায় নেওয়ার কথা জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সর্বশেষ কত বছর আগে যথাসময়ে বর্ষার মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে, তা মনে করতে পারছি না। আগামীকাল (আজ) রবিবারের মধ্যে টেকনাফ দিয়ে বিদায় নিচ্ছে মৌসুমি বায়ু। আর এতে এবার শীতের ব্যাপ্তি দীর্ঘ হওয়ার আভাস দিচ্ছে।’

শীতের ব্যাপ্তি দীর্ঘ হলেও তীব্রতা কি বেশি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার হলো এল নিনোর (উষ্ণ সামুদ্রিক স্রোত) বছর। বিশ^ আবহাওয়া সংস্থার ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এল নিনোর প্রভাব থাকবে। যেহেতু এল নিনোর প্রভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে উত্তপ্ত আবহাওয়া বিরাজ করবে, তাই এবার শীতের তীব্রতা কম থাকতে পারে; অর্থাৎ উষ্ণ শীতকাল দেখা যেতে পারে।’

এল নিনোর প্রভাবে আবহাওয়া পরিস্থিতি কী রকম হতে পারে জানতে চাইলে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ^বিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সের গবেষক ড. আশরাফ দেওয়ান বলেন, ‘এল নিনোর কারণে বিশে^র একেক অঞ্চলে একেক ধরনের অবস্থা দেখা দেয়। কোথাও বৃষ্টি বেশি হয় আবার কোথাও খরা দেখা দেয়। তবে আমাদের দেশে এ সময় বৃষ্টিপাত কমে যায় এবং উত্তপ্ত আবহাওয়া বিরাজ করে থাকে।’

এল নিনোর কারণে ভারত মহাসাগরের পানির উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এল নিনো বা উষ্ণ মহাসাগরীয় অবস্থা তৈরি হয় প্রশান্ত মহাসাগরে। এতে মহাসাগরে উষ্ণ স্রোত সৃষ্টি হয়। এই স্রোত ভারত মহাসাগর হয়ে পশ্চিম আফ্রিকার দিকে যায়।

ভারত মহাসাগরের পানি উষ্ণ হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, ‘এবারের শীত মৌসুমে পূর্ব ভারত মহাসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আর তা সৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গোপসাগর উত্তপ্ত থাকবে এবং এর প্রভাব পড়বে উপকূলে। তাই শীতকালের অনেকটা সময় উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। তারপরও পুরো শীতকালের চরিত্র কেমন হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’

ইতিমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা কমতে শুরুর কথা জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী প্রভৃতি এলাকায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। দিনাজপুরে গতকাল রেকর্ড হয়েছে ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং তেঁতুলিয়ায় ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সামনে এই তাপমাত্রা আরও কমবে।

তাহলে কি শীত শুরু হয়ে গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে মনোয়ার হোসেন বলেন, এবার ইতিমধ্যে নদী অববাহিকা এবং শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে।

শীত চলে আসার অন্যতম শর্ত হলো বর্ষার মৌসুমি বায়ু বিদায় হয়ে যাওয়া। গ্রীষ্মের শেষে জুনের প্রথম সপ্তাহে দেশের টেকনাফ প্রান্ত দিয়ে বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এবার ইতিমধ্যে তা দেশের মধ্যাঞ্চল থেকে বিদায় নিয়ে আগামীকালের (রবিবার) মধ্যে টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। অন্যদিকে গত বছর এই মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছিল ২০ অক্টোবর।

এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে গত বৃহস্পতিবার বিদায় নিয়ে মৌসুমি বায়ু শুক্রবার কক্সবাজার এলাকায় অবস্থান করছিল। রবিবারের মধ্যে তা টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করার কথা রয়েছে। তবে ইতিমধ্যে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে, সঙ্গে কুয়াশাও।’

উষ্ণ শীতকাল কেন হচ্ছে :

সারা বিশ্বে কয়েক বছর ধরে ‘লা নিনো’ ও ‘এল নিনোর’ প্রভাব চলছে। টানা তিন বছর লা নিনোর দাপটের পর গত জুলাইয়ে এল নিনোর আবির্ভাবের কথা নিশ্চিত করেছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। আর তা আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাপট দেখাবে। এই এল নিনোর কারণেই আসন্ন শীত মৌসুম উষ্ণ হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদদের ধারণা। যদিও বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরেই শীতকালে তীব্র শীত তেমন নেই। এ জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করে ড. আশরাফ দেওয়ান বলেন, ‘গত মার্চ মাসেও দেশে শীতের আবহ বিরাজ করেছে। আর এতেই বোঝা যাচ্ছে ঋতুচক্রে একটি পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। লা নিনো কিংবা এল নিনো কিন্তু বৈশি^ক জলবায়ুগত পরিবর্তনের ফলাফল।’

লা নিনো ও এল নিনো সম্পর্কে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদরা জানান, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও বায়ুমন্ডলীয় চাপের অনিয়মিত কিন্তু পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের ধরন এই দুটি অবস্থা।

এল নিনো বলতে উষ্ণায়ন পর্যায়কে বোঝায়। অন্যদিকে লা নিনো দিয়ে বোঝায় শীতলকরণ পর্যায়কে। এল নিনোর বছরগুলোতে তাপমাত্রা প্রায় শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। লা নিনোর সময়ে প্রায় একই পরিমাণে হ্রাস পায়। সাধারণত চার থেকে সাত বছর পরপর এল নিনো দেখা দেয়, স্থায়ী হয় ১২ থেকে ১৮ মাসের মতো। কিন্তু বর্তমানে এটি আরও ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে। এল নিনোর উল্টো অবস্থাই হলো লা নিনো।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!