তিন স্তরে সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের প্রেক্ষিতে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও বেশির ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীরা তা উপেক্ষা করেন। আর তার পুরো প্রভাব গিয়ে পড়ে ভোক্তাদের উপর।
গেল বুধবার কৃষি বিপণন অধিদপ্তর খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। পাশাপাশি পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা আর হিমাগার পর্যায়ে কেজি ২৩ টাকা বিক্রি করতে নির্দেশ দেয়। বাজার তদারকির জন্য কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৪২-৪৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা আগের দামের সমান। অথচ সরকার পাইকারি পর্যায়ে আলুর দাম ২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়। যা আগের দামের সমান।
ভোক্তাদের অভিযোগ, আলুর এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।
সরকারি তথ্য মতে, দেশে গত আলুর মৌসুমে প্রায় এক কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ লাখ ৯ হাজার টন। এতে দেখা যায় যে, গত বছর উৎপাদিত আলু থেকে প্রায় ৩১ লাখ ৯১ হাজার টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। মূলত অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই আলুর এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি।
তাদের মতে, শুধু দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবেনা, পাশাপাশি কঠোর মনিটরিং করতে হবে। মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে জনবলের ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে হবে। কোন অযুহাতেই দাম বাড়তে দেয়া যাবেনা। অবশ্যই দায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে তাদের ব্যবসায়িক লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান তারা। তা নাহলে মানুষের আয়ের সাথে ব্যায়ের বিস্তর পার্থক্য থেকে যাবে। ফলে মানুষের জীবন ধারণ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে।
ক্রেতা বাবুল আক্তার বলেন, চাল-ডাল সহ সব জিনিসের দাম বাড়তি। সবজির দাম বেশি হওযায় ইদানিং আলু বেশি খাওয়া হতো। তার দামও নাগালের বাইরে, তাহলে আমরা কি করে চলবো। শুনেছি সরকার আলুর দাম ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করতে বলেছে, কিন্তু আগের দামেইতো কিনতে হচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ী শওকত হোসেন বলেন, পাইকাররা দাম না কমালে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কি করতে পারি। আমারা যে দামে আলু কিনি তার সাথে পরিবহন খরচসহ সামান্য লাভ করি।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, হিমাগার পর্যায় থেকে সরকার নির্ধারিত দামে আলু না পেলে আমরা কিভাবে দাম কমাবো। আমরাতো বেশি দামে আলু কিনেছি। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করলে লোকসানের শিকার হবো। তারা হিমাগার পর্যায়ে তদারকির আহবান জানান।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তালুকদার খুলনা গেজেটকে বলেন, তারা বাজার তদারকি করছেন, নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না করায় ইতোমধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করেছেন। বাজারে আলুর দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্যা খুচরাপর্যায়ে আলুর এমন দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করে কৃষি বিপণন অধিদফতর ভোক্তাপর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির নির্দেশনা দিয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি আলুর দাম ৫০-৫৫ টাকায় গিয়ে ঠেকে। আকস্মিক এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতারা পাইকারি বিক্রেতাদের, আর পাইকারি বিক্রেতারা হিমাগার মালিকদের দুষছেন। কারণ হিসেবে তারা বৃষ্টি ও বন্যাকে দায়ী করেন। এছাড়া তিনি সব আলু কোল্ডস্টোরেজ মালিকদের কাছে চলে গেছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন।
খুলনা গেজেট /এমএম