বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রাম। গ্রামটির চারটি পাড়ার দুই শতাধিক বাড়ির দরজা কিংবা দেয়ালে গত শনিবার রাতে ২০০ টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে পোস্টারিং করা হয়েছে। আগামী ৬ অক্টোবরের মধ্যে গ্রামের একটি পুকুরপারে লাইট পোস্টের সঙ্গে লাগানো বাক্সে চাঁদার টাকা দিতে বলা হয়েছে। টাকা না দিলে ৭ অক্টোবর থেকে গ্রামের ছেলে-মেয়ে হারিয়ে গেলে কারো কিছু করার থাকবে না বলে পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছে।
রবিবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ওই চার পাড়ার মানুষ এ ধরনের পোস্টারিং দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তবে পুলিশ বলেছে, আতঙ্কের কিছু নেই। মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে এই পোস্টারিং। তবে গ্রামের বাসিন্দারা বলছে, বিষ্ণুপুরে মাদক বাণিজ্য কিংবা সেবনকারী নেই বললেই চলে।আতঙ্কে অনেকে গতকাল তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠায়নি। অনেক পুরুষ কাজেও যায়নি।
সকাল ১০টার দিকে বিষ্ণুপুর গ্রামের দপ্তরিপাড়া, মাজাগাড়িপাড়া, মোন্নাপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়ির দরজা কিংবা দেয়ালে কম্পিউটারে কম্পোজ করা ছোট আকারের পোস্টার সেঁটে দেওয়া হয়েছে। এসব পোস্টারে বলা হয়েছে, ৬ তারিখের মধ্যে টাকা দিতে হবে।
না হলে ৭ তারিখ থেকে গ্রামবাসীর ছেলে-মেয়ে হারিয়ে গেলে কিছু করার থাকবে না। আমরা কে সেটা না খুঁজে, যা বলছি সেটা করার চেষ্টা করেন, তাহলে কিচ্ছু হবে না।
গ্রামটির বাসিন্দা নাসিমা আক্তার, মালেকা বেগম, সাজেদা বেগম, পারভিন খাতুন, আলেয়া বেগমসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামটির বেশির ভাগ বাসিন্দা কর্মজীবী। কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ কাঠমিস্ত্রি, কেউ বা ইলেকট্রনিক মিস্ত্রির কাজ করে। মোটামুটি সবাই সচ্ছল।
তবে এই চার পাড়ায় ধনী পরিবার নেই। সকালে প্রতিটি বাড়ির দরজায় এ ধরনের পোস্টার সাঁটা দেখে অনেকে আতঙ্কে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠায়নি।
মাজাগাড়িপাড়ার কাঠমিস্ত্রি নয়ন প্রামাণিক বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বাড়ির দেয়ালে পোস্টার লাগানো। পরে জানতে পারি চার পাড়ার প্রায় দুই শতাধিক বাড়িতে এ ধরনের পোস্টার লাগানো হয়েছে। আমার দুই সন্তানকে আজ (গতকাল) স্কুলে পাঠাইনি। আমিও কাজে যাইনি।’
মুরইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমাদের ধারণা, গ্রামের বখাটেরা যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত তারা গ্রামে আতঙ্ক ছড়াতে এ ধরনের পোস্টারিং করেছে। রবিবার রাত থেকে গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) দিয়ে পুরো গ্রাম পাহারা দেওয়া হবে।’
কাহালু থানার ওসি মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি মাদকাসক্তদের কাজ বলে ধারণা করছি। জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করেছে। রাতে ওই গ্রামে পুলিশ টহল দেবে।’
খুলনা গেজেট/এইচ