বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন তৃণমূল বিএনপির সদ্যনির্বাচিত চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আর তা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই সম্ভব। এক্ষেত্রে নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত রাষ্ট্রের সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠানকে নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
শমসের মবিন বলেন, ‘প্রশাসন যদি তাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করে, নির্বাচন কমিশনকে যদি তাদের প্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়, সে ক্ষমতা যদি তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে অবশ্যই বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব। দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরা সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছি।’
মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তৃণমূল বিএনপির জাতীয় সম্মেলন ও প্রথম কাউন্সিলে দলটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন শমসের মবিন চৌধুরী আর মহাসচিবের দায়িত্ব পান অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এই দলের প্রতিষ্ঠিতা।
বিএনপি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন করছে, তাতে জনগণ সাড়া দেবে না বলে মনে করেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন।
তিনি বলেন, ‘এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব প্রথমে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাই দিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এখন ঘুরে-ফিরে তারা এ জায়গায় এসেছে। আমি মনে করি, তাদের কিছু দলীয় কর্মী ছাড়া জনগণ তাদের আন্দোলনে সাড়া দেবে না।’
শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য হন।
নতুন দলে যোগ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, ‘তৃণমূল শব্দটা আমার কাছে খুব পছন্দ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ করেছে তৃণমূলের মানুষ। আজকে বাংলাদেশের তৃণমূলের মানুষ বঞ্চিত, তাদের মূল্যায়ন হয় না। আমি চেষ্টা করব তাদের কথা বলতে।’
তৃণমূল বিএনপিতে উল্লেখযোগ্য কেউ যোগ দিচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সামনে আমাদের নীতি ও আদর্শে সাড়া দিয়ে অনেকে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেবেন।’
নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই ‘কিংস পার্টি’ গঠিত হয়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেশে কিংস পার্টি বলতে কিছু নেই। ১/১১-এর সময় কয়েকটি দল কিংস পার্টি নামে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তৃণমূল বিএনপি জনগণের পার্টি। আমরা মানুষের কথা বলব। নতুন প্রজন্ম নতুন বার্তা শুনতে চায়। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায়। আমরা স্বাধীনভাবে এবং মুক্ত চিন্তাধারায় কাজ করছি। আর সে লক্ষ্যেই মাঠে নেমেছি।’
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে বলেও মনে করেন তৃণমূল বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। তবে যে কয়টি বিষয় জনগণকে আঘাত করেছে, তার অন্যতম হলো দ্রব্যমূল্য। এটি সাধারণ জনগণের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আজকে আমরা পর্যাপ্ত আলু উৎপাদন করলেও তা আমদানি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সরকার যদি মজুদদারদের সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে ভোগান্তি দিনে দিনে বেড়েই চলবে। আমি বিশ্বাস করি, সিন্ডিকেটগুলো চাপে রাখার শক্তি সরকারের আছে। যদি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে সরকার সমস্যায় পড়তে পারে। আমি মনে করি, সরকারের হাতে এখনও সময় আছে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’