পরিবেশ ও জলবায়ূ ইসু্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন খুলনার রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তারা সম্মিলিতভাবে বলেছেন, জলবায়ূ পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খুলনা অঞ্চল।
বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় প্রতিনিয়ত ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সুপেয় পানির সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, প্রাণ-প্রকৃতি নষ্ট হচ্ছে। ফলে সকল মতভেদ ভুলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ কাজ করতে হবে।
রবিবার (১৭ আগস্ট) রাতে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে পরিবেশ ও জলবায়ূ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ প্রতিশ্রæতি দেন। বেসরকারি সংস্থা অ্যাওসেড এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সিপিবি, জাসদ ও বাসদের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। জলবায়ূ ও পরিবেশ ইস্যুতে এই প্রথম সকল নেতারা একমে দাঁড়ালেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উপক‚লীয় পানি সম্মেলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরফীন।
নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, পরিবেশ ও জয়বায়ূ পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশী ঝুঁকি ও ক্ষতির শিকার খুলনা অঞ্চল। মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। নদ-নদীগুলো ন্যবতা হারাচ্ছে ও লবণাক্ততা বাড়ছে। এ থেকে কেউ বাদ যাবে না। ক্ষতি কোন দল দেখবে না। তাই আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্থানীয় ইস্যুগুলোকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরে ক্ষতিপূরণ আদায় ও সমস্যা নিরসনে কাজ করা জরুরী। আসুন আমরা এই ইস্যুতে আমরা খুলনা থেকে একসাথে কাজ করে যাত্রা শুরু করতে চাই।
নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন নদ-নদীর ন্যবতা হ্রাস, পানি সংকট, লবণাক্ততাসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে বলেন। ফারাক্কা, অবৈধ দখল, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের ক্ষতি করছে। এসব নিয়ে সম্মিলিত অঙ্গীকার ও কাজ করবে।
জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধূ বলেন, খুলনা নদীগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। নগর সংলগ্ন ২২টি খাল, ময়ূর নদ অবৈধ দখলদারমুক্ত করা যাচ্ছেনা। সুন্দরবন হুমকির মুখে। তাই অ লের মানুষের জন্য হলেও আমাদের এক হতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) জেলা সভাপতি ডা. মনোজ দাশ পরিবেশ ও জলবায়ূ ইস্যুতে নিজ দলের মনোভাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত পূঁজিবাদী উন্নয়ন আমাদের সংকটে ফেলে দিয়েছে। পরিবেশ ক্ষতিতে বাংলাদেশের দায় মাত্র শুণ্য দশমিক চার শতাংশ। অথচ ক্ষতির তালিকায় দশের মধ্যে। যারমধ্যে খুলনা এক নম্বরে। অবশ্যই মানুষকে বাঁচাতে আমাদের এক সঙ্গে কথা বলতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা খালিদ হোসেন বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তন আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এ বিপদ আরো ভয়ংকর রূপ নেবে। অথচ পরিবেশের ক্ষতির জন্য দায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ধনী দেশগুলোর কোন উদ্বেগ নেই। তারা ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ক্ষতিহ্রাসের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চায়। রাজনৈতিক মত পার্থক্য সত্তে¡ও এ ইস্যুতে আমরা অভিন্ন।
বাংলাদেশ জাসদের জেলা সভাপতি রফিকুল ইসলাম খোকন জলবায়ূ ও পরিবেশ ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, দলকে বাঁচাতে হলে মানুষকে বাঁচাতে হবে। আর মানুষকে বাঁচাতে হলে পরিবেশকে বাঁচাতে হবে।
বাংলাদেশের সমাতান্ত্রিক দল (বাসদ) জেলা আহবায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, আমরা ধনী ও সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর রাজনীতির শিকার হচ্ছি। তারা পরিবেশের ক্ষতি করেও ক্ষতিপূরণ দিতে চায়না। উল্টো ক্ষতি শিকার দেশগুলোকে তাদের দাসত্বে পরিণত করতে চায়। মূলত মুনফালোভীরা পরিবেশকে ধ্বংস করছে। দলমত নির্বিশেষে এখানে একসঙ্গে কথা বলতে হবে।
সভায় নিজ নিজ দলের পক্ষে আরো অভিমত তুলে ধরেন বিএনপির জেলা যুগ্ম আহবায়ক আশরাফুল আলম নান্নু, জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য কুমার মন্ডল, নগর আওয়ামী লীগের তথ্য সম্পাদক মো. আলী আকবর টিপু, বিএনপি নেতা কে এম হুমায়ূন কবির প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী, নগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রেহানা ঈশা, জাসদের নগর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোর্ত্তজা প্রমুখ।