সুন্দরবনের গহীনে বনরক্ষীদের গুলিতে মো. জয়নাল (৩২) নামের জেলে আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩ দিকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত জয়নাল পাথরঘাটা উপজেলার সদর পাথরঘাটা ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে।
তিনিসহ কয়েকজন একটি নৌকায় পাশপার্মিট ছাড়া সুন্দরবনে প্রবেশ করেছিল বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। জয়নালকে প্রথমে পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরে বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে তাকে পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে জেলেসহ সুন্দরবনের একাধিক সূত্র বলছে, গুলিবিদ্ধ হয়ে জেলেরা ট্রলার নিয়ে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের কচিখালী স্টেশনে যায়। সেখান থেকে তাদের চিকিৎসার জন্য পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌছে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনার পাথরঘাটা এলাকার এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি ছাড়াও ওই ট্রলারের বাকিরা আহত হন। তারা শিকারী নন, জেলে। সবাই মাছ ধরতে সুন্দরবনে গেছিল। বন বিভাগকে ম্যানেজ করে না যাওয়াতে ওই ঘটনা ঘটে।
আহত জয়নাল বলেন, সুন্দরবনের কচিখালী-কটকা এলাকায় বলেশ্বর নদে মাছ ধরার সময় বনবিভাগের স্মার্ট বাহিনী (টহল টিম) তাদের ধাওয়া করে। এসময় তারা দ্রুত ট্রলার চালিয়ে যাওয়ার সময় স্মার্ট বাহিনী এলোপাথাড়ি গুলি করলে তার ডান হাতে গুলি লাগে।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রুবাইয়াত আলী বলেন, সকালে আমাদের এখানে গুলিতে আহত এক রোগী আসেন। তিনি আমাদের বলেছেন, জলদস্যুরা নাকি আক্রমন করছে। আহত ব্যক্তির ডান হাতের কনুই এর উপরে (বাহুতে) গুলি লেগে বেরিয়ে গেছে। ক্ষতস্থানের ভেতরে গুলি পাওয়া যায়নি। গুলি ঢোকা ও বেরিয়ে যাওয়ার দুটি ক্ষত ছিল। হাতের ক্ষত বেশ গুরুত্বর।তাকে বরিশাল পাঠানো হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহবুব হাসান বলেন, সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য এলাকার একটি খালে টহলকালে একটি ট্রলার দেখে পায় স্মার্ট টহল দল। তারা ট্রলারটিকে থামাতে নির্দেশ দিলে না দাড়িয়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এ সময় ওই ট্রলার থেকে কিছু একটা পানিতে ফেলে দেয় তারা। তখন বনরক্ষীরা তাদের থামাতে ফাঁকা গুলি ছুড়লে ফোর সিলিন্ডার ট্রলার নিয়ে বন বিভাগের স্পিডবোর্ডে ধাক্কা দেয়। এতে তিন বনরক্ষী নদীতে পড়ে যায়। আমাদের স্পিড বোর্ডে ধাক্কা দিলে তা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন বনরক্ষীরা গুলি ছুড়ে।
ওই ট্রলারটিতে হয় তো ৫-৭ জন ছিল। পরে সেখান থেকে খালে পাতা অবস্থায় নিষিদ্ধ বেহেন্দি জাল এবং বনের মধ্যে তল্লাশী করে হরিণ শিকারের ফাঁদ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তখন হয় তো তারা ট্রলার থেকে হরিণের মাংস পানিতে ফেলে ছিল। এ ঘটনায় বন আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
খুলনা গেজেট/এমএম