খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

এডিসি হারুনের পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পরষ্পর বিরোধী মতামত

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ ও তার পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ও এলাকাবাসী পরষ্পরবিরোধী মতামত দিয়েছেন। এসব জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কারো মতে তার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছে। আবার কারো মতে তারা স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সদস্য।

ছাত্রলীগের তিন নেতাকে থানায় ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে ইতিমধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তিনি নিজে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হলেও অভিযোগ উঠেছে তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে তার এলাকার লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য।

হারুনের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের থানাঘাটা গ্রামে। থানাঘাটার আগে তার বাবা জামালউদ্দীন গাজীর বাড়ি ছিল একই ইউনিয়নের বালিয়াখালী গ্রামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালউদ্দীন গাজী পাশের গ্রাম মাড়িয়ালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন-যাপন করছেন। হারুনের মা শেফালী বেগম একজন গৃহিণী। বাবার কর্মস্থল মাড়িয়ালা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন হারুন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির (টিপু-বাদশা কমিটি) বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন। হারুনের ছোট ভাইয়ের নাম শরীফুল ইসলাম। তিনি সাইফুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়াবিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন শরীফুল। তার পরিবারের আর কেউ সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেই।

সাতক্ষীরা জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রীউলা ইউনিয়নে হারুনের বাড়ির পাশের বকচরা গ্রামের আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হারুনরা দুই ভাই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত বলে আমরা জানি। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও ভোটের সময় তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে। স্থানীয় দলীয় কোন্দলের কারণে কিছু লোক তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু হাসান জানান, হারুন সহ তারা দুই ভাই ছাত্রলীগ করতো বলে আমরা জানি। তারা জাতীয় নির্বাচনসহ যে কোন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পিছনে কাজ করে। তবে তার বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত নয়।

মাড়িয়ালা প্রাইমারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক রুহুল আমিন মোল্লা জানান, প্রাইমারি লেভেলে হারুন আমার ছাত্র ছিল। মাড়িয়ালা হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য তারা দুই ভাই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।

এলাকায় তাদের দুই ভাইয়ের যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তার বাবা কোন দল করে না। তবে হারুনের মামার গোষ্ঠিরা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত বলে শুনেছি।

শ্রীউলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হারুনের গ্রামের বাড়ি থানাঘাটা গ্রামের বিধান চন্দ্র বাইনের ছেলে বরুণ কুমার বাইন জানান, বিগত ইউপি নির্বাচনের সময় হারুনের পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। সে কারণে তাদের উপর ক্ষুব্ধ বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর বাছাড় দিপু। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। নির্বাচনে তার পক্ষ না নেয়ায় তিনি হারুনের পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এছাড়া হারুন ও তার পরিবারের সদস্যরা যে কোন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে একটি পক্ষ তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

এ বিষয়ে শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রভাষক দীপঙ্কর বাছাড় সাংবাদিকদের বলেন, হারুনের নানা হাজরাখালী গ্রামের বাবর আলী সানা চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। তাদের পরিবারের অন্যরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে শ্রীউলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা সাকিল বলেন, হারুনের পরিবারের লোকজনকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে দেখেছেন। বিশেষ করে গত দুইটি সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার ইউনিয়নের পোলিং এজেন্টদের যাবতীয় খরচ এডিসি হারুন ঢাকা থেকে পাঠাতেন। সে সময় হারুনের বাবা-মা নৌকার পক্ষে মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনাও করেছেন।

তিনি বলেন, তার নানার পরিবারের সঙ্গে জমাজমি নিয়ে বিরোধের কারণে শ্রীউলা ইউনিয়নের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন জোয়ারদার ও তার ছেলে পলাশ বিভিন্ন স্থানে তাকে জামায়াত-বিএনপি বানানোর চক্রান্ত করছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী বলেন, হারুনের বাবা শিক্ষক ছিলেন, ভাই শরীফুল ইসলামও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। তারা সব সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!