জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে ভারত। নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে সম্মেলনস্থল, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের জন্য হোটেল আর পর্যটনের জায়গাগুলো। ক্রমাগত দিল্লির আকাশে টহল দিচ্ছে ভারতের এয়ার ফোর্স আর সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার। উচ্চ ভবনগুলোর বাড়তি নিরাপত্তায় ছাদে ছাদে বসানো হয়েছে আর্মি স্নাইপার। পাশাপাশি কাজ করছেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) কমান্ডোরা। এমনকি সম্ভাব্য হুমকি বেলায় আছে অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম। নয়াদিল্লিজুড়ে এখন কঠোর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। শুক্রবার নয়াদিল্লির রাস্তা ছিল জনমানবহীন আর নির্জন। যানবাহন আর পরিচয় তল্লাশিতে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড। ঢুকতে পারছে না মাছিও-এক কথায় পুরো নয়াদিল্লিই এখন দুর্গ। টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু।
এদিন সকাল ৫টা থেকে রোববার রাত ১১.৫৯ পর্যন্ত নয়াদিল্লিকে নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্কগুলো দর্শনার্থীবিহীন। সম্মেলনস্থল আর হোটেলগুলোর আশপাশে বন্ধ ওষুধ ব্যতীত সব অনলাইন ডেলিভারি পরিষেবা।
হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে অথবা পিকনিকের উদ্দেশে ইন্ডিয়া গেট ও কর্তব্য পথে না যাওয়ার অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে পুলিশ জানিয়েছে, অ্যাম্বুলেন্স, স্থানীয় বাসিন্দা ও সেই অঞ্চলে অবস্থানরত পর্যটকদের যথাযথ শনাক্তকরণ নথি উপস্থাপনের পর প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। দিল্লি মেট্রো শুক্রবার সকাল ৪টা থেকে নেটওয়ার্কের সব লাইনে টার্মিনাল স্টেশন থেকে তার পরিষেবাগুলো শুরু করেছে। শনি ও রোববার পর্যন্ত এই পরিষেবা অব্যাহত থাকবে। নয়াদিল্লিতে বাজপাখি নজরদারিতে আছে কুকুর স্কোয়াড ও মাউন্টেড পুলিশসহ ৫০ হাজারেরও বেশি কর্মী।
সম্মেলন শুরুর আগেই দিল্লিতে পৌঁছেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, যুক্তরাজ্যের এমআই-৬ ও চীন থেকে এমএসএস-সহ আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার দল। দিল্লিতে অবস্থানকালে রাষ্ট্রপ্রধান ও তাদের প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা সহজতর করবে তারা।
জি-২০ আন্তর্জাতিক সম্মেলন ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। সম্মেলনস্থল প্রগতি ময়দান তথা ‘লুটিয়েন দিল্লি’ ঘিরে বিশেষ ট্রাফিক বিধি বৃহস্পতিবার রাত থেকেই চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তর থেকে সব মন্ত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জি-২০ সম্মেলনে যাওয়া-আসার জন্য নিজেদের গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। নির্দিষ্ট নিরাপত্তারক্ষীদের প্রহরায়, নির্দিষ্ট সময়ে চলা বাসে করেই সভাস্থল ‘ভারত মন্ডপম’ কেন্দ্রে যাতায়াত করতে হবে।
ইতোমধ্যে দিল্লি পৌঁছে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভারত সরকারের এই নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মমতা বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শুধু নয়, আমাদের মতো দেশের সব মুখ্যমন্ত্রীকেও নাকি ওই বাসে করেই যাতায়াত করতে হবে। সম্মেলনে আমাদের বাসে করেই নিয়ে যাবে।’ অর্থাৎ বিহারের নীতিশ কুমার, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তামিলনাড়ুর স্টালিন থেকে পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির মতো দেশের ২৩ জন মুখ্যমন্ত্রীকেই বাসে করে আগামী ২ দিন দিল্লিতে ঘুরতে হবে।
খুলনা গেজেট/এইচ