খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ মাঘ, ১৪৩১ | ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  দৈনিক ভোরের কাগজের প্রধান কার্যালয় বন্ধ ঘোষণা
  সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের

ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়লেও গরিবের পাতে নেই ইলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইলিশ নাকি মাছের রাজা। রাজা কিংবা রানি-যে নামেই ডাকা হোক, এর স্বাদ, গন্ধ পর্যন্ত নিতে পারছে না সাধারণ মানুষ। চলছে ইলিশ মৌসুম। ঝাঁকে ঝাঁকে ধরাও পড়ছে। কিন্তু দরিদ্রদের নাগালের বাইরে থাকছে এই রুপালি মাছ। ইলিশের দাম কখনো নির্ধারণ করে দেওয়া হয় না। যাদের অর্থকড়ি বেশি, ইলিশে তাদের ফ্রিজ ভরা থাকে।

খুলনার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারভেদে এক কেজি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রায় বারশ’ থেকে দেড় হাজার টাকায়। ৭০০/৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজারের মধে্য পাওয়া যাচ্ছে। বড় ইলিশ কেনার সামর্থ্য না থাকায় ৫০০/৬০০ টাকা দিয়ে জাটকা কিনতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। দামের আগুনে দরিদ্র মানুষ ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে না। অথচ বিশ্বে মোট ইলিশ উৎপাদনের প্রায় ৮৬ শতাংশই ধরা পড়ে বাংলাদেশের জেলেদের জালে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইদানীং ইলিশের ছবিসহ চড়া দামে বিক্রি হওয়ার তথ্য পোস্ট করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বলছে, দেশে এত ইলিশ কিন্তু দাম কমছে না। গরিব মানুষ ইলিশের নাম জানে-খেতে পায় না। মধ্যস্বত্বভোগী-সিন্ডিকেট সদস্যরাই শুধু লাভবান হচ্ছে। ‘রাজা’ ইলিশ ধনীদের ঘরেই যায়। গরিবরা শুধু নামই শোনে।

মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার প্রধান কর্মকর্তা মাসুদ আরা মমি বলেন, আমরা ইলিশ উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাজারজাতের সঙ্গে আমরা জড়িত নই। ইলিশের দাম কখনোই নির্ধারিত হয় না। ওজন, তরতাজার সঙ্গে দামের পার্থক্যও ব্যাপক। দাম বাড়লেও একটি ইলিশও কিন্তু অবিক্রীত থাকে না। সরকার জেলেদের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছে। জেলেদের ভিজিএফ প্রদানসহ আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করছে। সাড়ে ৫ লাখ জেলে সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছে। ইলিশ উন্নয়ন তহবিল করা হয়েছে। সেই তহবিল থেকেও জেলেদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বরগুনায় ২ কেজি ১২ গ্রামের একটি রুপালি ইলিশ বিক্রি হয় ৯ হাজার টাকায়। চট্টগ্রামে ৩ কেজি ওজনের একটি ইলিশের দাম ওঠে ১৬ হাজার টাকা। শুধু সাম্প্রতিক সময়ে নয়, ২০১৬ সালের ১১ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারে ৩ কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হয় সাড়ে ১৪ হাজার টাকায়।

চট্টগ্রামের সাগরে অনেক ইলিশ ধরা পড়ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাট, রাসমণি ঘাট, আনন্দবাজার ঘাট, উত্তর কাট্টলি, দক্ষিণ কাট্টলি ও আকমল আলী ঘাটসহ সাগর উপকূলবর্তী এলাকায় ইলিশ বিক্রির ধুম পড়েছে। জেলার মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা, বাঁশখালী এবং সন্দ্বীপ উপকূল এলাকায়ও প্রতিদিনই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দের ভাষ্য, ইলিশ প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়লেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশের উৎপাদন বাড়লেও দাম কমছে না জানিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ইলিশের দাম নির্ধারণ করলেই সাধারণ মানুষ এই মাছ খেতে পারবে। জেলেরাও ভালো দাম পাবে।

মৎস্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের হিসাবে বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। অথচ চার বছর আগেও বিশ্বের ইলিশ উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ আসত বাংলাদেশ থেকে। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ইলিশের উৎপাদন। সে তুলনায় প্রতিবেশী ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানে ইলিশের উৎপাদন কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই সব দেশে ইলিশের উৎপাদন কমলেও দাম নিয়ন্ত্রণে থাকছে। বাংলাদেশে উৎপাদন বাড়ছে, পাশাপাশি দামও বাড়ছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!