দেশে বজ্যপাতে প্রাণহাণি ঠেকাতে অভয়নগরে জনস্বার্থে ৬১ হাজার তাল গাছ লাগিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নাম তার চিত্তরঞ্জন দাস, বয়স ৬৬ পেরিয়ে গেছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামে তার জন্ম। ওই গ্রামেই তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। চিত্তরঞ্জন দাসের মূল পেশা কৃষি। তিন একজন বর্গা চাষী। কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনি তাল গাছ লাগান। এখন তার একমাত্র নেশা তালগাছ রোপন করা ও পরির্চযা করে বড় করা। তাল গাছের গুরুত্ব উপলব্ধি করে তিনি ২০০৮ সাল থেকে সড়কের পাশে ও সরকারি পতিত জমিতে তালের বীজ রোপন শুরু করেন। প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে তিনি নিজ অর্থ ব্যয় করে এলাকা থেকে তাল বীজ সংগ্রহ করে তা নিজ হাতে ও মজুর কিনে রোপন করেন। এ পর্যন্ত তিনি ১৪ বছর ধরে ৬১ হাজার তালবীজ রোপন করেছেন। তার রোপনকৃত তালগাছ এখন দৃশ্যমান।
সম্প্রতি তার জনহিতৌসী কর্মকান্ডের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দূর -দূরান্ত থেকে অনেকে আসছেন তার তালগাছ দেখতে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তার তাল সাম্রাজ্যের খোঁজ নিতে শুরু করেছেন। গত শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর)) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আবু নওশাদ তার রোপনকৃত তালগাছ ও বীজ রোপন কর্মকান্ড পরিদর্শনে উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামে ছুটে আসেন। তিনি চিত্তরঞ্জন দাসের সাথে কয়েকটি বীজ রোপনও করেন।
চিত্তরঞ্জন দাস জানান, এ পর্যন্ত তিনি ৬১ হাজার তালের বীজ রোপণ করেছেন ১৪ বছর ধরে। তার রেপন করা তালগাছ এখন দৃশ্যমান। দু‘এক বছর পরেই অনেক গাছে ফল ধরবে। এত গাছ থাকতে তিনি তালগাছ লাগানোকে কেন গুরুত্ব দিয়েছেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাল গাছের কোন কিছুই ফেলনা না, পাকা তাল, চোখ তাল, তালের আঁটির শাঁশ, তালের রস-গুড় গ্রামবাংলার মানুষের প্রিয় খাবার। তাছাড়া তাল পাতার পাখা, পাতা ও ডাটার জ¦ালানী গ্রামে বেশ গুরুত্ব বহন করে। দেশে বর্জপাতে প্রাণহানী ঠেকাতে তালগাছ অনেক ভূমিকা রাখে। সর্বপরি বাড়ি ঘর বানানোর কাজে তাল কাঠের জুড়ি নেই। তালের নৌকা বানাতে এ গাছের দরকার হয়। তার দৃষ্টিতে উঁচু তালগাছ না থাকায় বাবুই পাখিরা আর বাসা বাঁধে না। এসব দিক বিবেচনায় তিনি তাল সাম্রাজ্য বিস্তারের সংকল্প করেছেন। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন তত দিন তালবীজ রোপন করে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
উপজেলার ধোপাদী গ্রামের সড়কগুলোতে গেলে দেখা যায়, তার লাগানো সারি সারি তালগাছ মাথা উঁচু করে শোভা বর্ধণ করছে। এছাড়া, বুইকারা, সরখোলার, সড়াডাঙ্গা, ধোপাপাড়া, গোবিন্দপুর, ভবদহের চোমরডাঙ্গা সহ এলাকার প্রায় ৩২টি সড়কে রয়েছে তার রোপন করা তাল গাছ। অনেক স্থানে অসাধু লোকজন তার তাল চারা গাছ থেকে পাতা কেটে ক্ষতি করেছে।
তিনি আরো জানান, বিভিন্ন কারণে অনেক গাছ বড় হতে পারেনি। গাছ একটু বড় হলেই অনেকে ডাল-পাতা ছেঁটে নিয়ে যায়। তালপাখা বানানোর জন্য এক শ্রেণির অসাধু লোক পাতা কেটে নিয়ে যায়। আমি একদিন থাকব না, কিন্তু এই তালের চারা আমার স্মৃতি বহন করবে এমন কামনায় তিনি এলাকায় এ তাল সাম্রাজ্য বিস্তার করে চলেছেন। এ বছর তিনি ২০ হাজার তালের বীজ কিনেছেন। প্রতিদিন তিনি বীজগুলো রোপন করে চলেছেন।
ধোপাদী গ্রামের আয়ুব খান জানান, আমরা বিলে কাজ করতে যাই। পরিশ্রম হলে তার রোপন করা তালগাছের ছায়ায় বিশ্রাম করি।
ধোপাপাড়া গ্রামের হরে কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, চিত্তরঞ্জন দাসের লাগানো সারি সারি তালগাছ দেখে আমার খুব ভাল লাগে। তাকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তার দাবি করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা: লাভলী খাতুন বলেন, দেশে বর্জপাত থেকে প্রাণহানী ঠেকাতে চিত্তরঞ্জন দাস অনেক আগে থেকে তালবীজ রোপন করে চলেছেন। তাকে কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করা হবে। এ বছর তাকে সহযোগিতা করতে ২ জন শ্রমিক কাজ করবে। তাদের পারিশ্রমিক আমাদের অফিস বহন করবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম আবু নওশাদ বলেন, চিত্তরঞ্জন দাস দেশের জন্য এক মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও বজ্রপাত রোধে তালগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিত্তরঞ্জন দাসকে সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।
খুলনা গেজেট/কেডি