দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় কমিটি বিহীন খান জাহান আলী থানা ছাত্রলীগ। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিজস্ব বলয়ের কর্মীদের দিয়ে কমিটি গঠনের মানসিকতার কারণে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কমিটি গঠনের চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। হতাশ হয়েছে নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা। ফলশ্রুতিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
খানজাহানআলী থানা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয় দেড় যুগ পূর্বে ২০০৪ সালে। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন মোঃ সেলিম রেজা যিনি বর্তমানে খানজাহানআলী থানা আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং থানা যুবলীগের সদস্য। আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোঃ কামাল আহমেদ যিনি বর্তমানে থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, খানজাহানআলী থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে খন্দকার হাফিজুর রহমান বাচ্চু ও এফ এম জাহিদ হাসান জাকির। পরবর্তীতে মোঃ হাফিজুর রহমান মোর্তজা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং এফ এম জাহিদ হাসান জাকির পুনরায় সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। এরপর মোঃ নাসির উদ্দিন সভাপতি এবং রবিউল ইসলাম রবি সাধারন সম্পাদক মনোনীত হন। পরবর্তীতে তরিকুজ্জামান মনির আহ্বায়ক মনোনীত হন।
সর্বশেষ ২০০৪ সালে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ এবং সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাসান হিটলু কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে মোঃ সেলিম রেজাকে সভাপতি ও মোঃ কামাল আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন ঘোষনা করেন। দেড় যুগ আগে গঠিত এটাই ছাত্রলীগের খানজাহানআলী থানা ইউনিটের সর্বশেষ কমিটি। দীর্ঘ সময়ে কমিটি না হওয়ায় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা হতাশ হয়েছেন বারবার।
নামমাত্র মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি থাকলেও তাদের কোন কার্যক্রম নেই। কারণ ইতিমধ্যে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান রাসেল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন।
দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ার ব্যাপারে শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন খুলনা গেজেটকে বলেন, মহানগর ছাত্রলীগের দায়িত্বে আসার পর আমরা থানা ছাত্রলীগের কমিটিগুলো গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু নানান কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। প্রথমতঃ নির্বাচন চলে আসায় দ্বিতীয়তঃ বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে প্রায় তিন বছর সাংগাঠনিক কার্যক্রম কিছুটা স্থিমিত ছিলো। পরবর্তীতে আমরা নগর ছাত্রলীগের সম্পাদক দুই জন দুই সংগঠনের দায়িত্ব চলে গেলাম। এ সব নানাবিধ কারণে কমিটি গঠন করা হয়ে ওঠেনি।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি গঠিত হবে। গঠিত নতুন কমিটি থানা কমিটিগুলো গঠন করবে ইনশাআল্লাহ।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান রাসেল বলেন, আমরা দুই জন দুই সংগঠনের দায়িত্বে চলে যাওয়ায় শেষমেশ আর থানা কমিটি গঠন করা হয়নি। তিনি বলেন, চলতি মাসেই মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হবে। তারপর থানা কমিটি গঠিত হবে।
দীর্ঘ দেড় যুগ কমিটি না হওয়ার ব্যাপারে সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান খানজাহানআলী থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল আহমেদ খুলনা গেজেটকে বলেন, আমাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন কমিটি গঠনের জন্য আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু থানা আওয়ামীলীগ যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের অসহযোগিতার কারণে আমরা কমিটি গঠন করতে উদ্যোগ নিয়েও সফল হতে পারেনি। আমরা চেয়েছি সম্মেলনের মাধ্যমে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোক। কিন্তু আওয়ামীলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সেটা চাননি। তারা চেয়েছেন তাদের পকেটের লোক দিয়ে কমিটি করতে। মাই ম্যান হবে কমিটির সভাপতি, সম্পাদক। কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শরণাপন্ন হয়েছি। কিন্তু আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব স্থানীয়দের মেরুকরণের কারণে আমরা সফল হতে পারেনি। তিনি বলেন, সঠিক সময়ে সম্মেলন হলে ১৮ বছরে ৯ জন করে ১৮ জন সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্ব তৈরি হতো।
খানজাহান আলী থানার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এ এফ এম জাহিদ হাসান জাকির খুলনা গেজেটের কাছে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ৯০ ‘র দশকের পর থেকে খান জাহান আলী থানায় ছাত্রলীগের নবজাগরণ সৃষ্টি হয়। তখন ২ নং ওয়ার্ড এবং ৩৩ থেকে ৩৬ নং পর্যন্ত ৫ টি ওয়ার্ডে ছাত্রলীগের শক্তিশালী কমিটি ছিলো। ৯০ ‘র পর আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময়গুলোতে সরকার বিরোধী প্রত্যেকটা আন্দোলন সংগ্রামে খানজাহান আলী থানার প্রাণকেন্দ্র ফুলবাড়িগেটে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিটা আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের সরব উপস্থিতি থাকতো। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় দীর্ঘ যুগ ধরে ছাত্রলীগের কোন কমিটি নেই। কমিটি না থাকার কারণে নতুন নতুন নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে খানজাহানআলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে ক্ষমতাসীন দলের একটি ছাত্র সংগঠনের কমিটি না থাকা খুবই দুঃখজনক এবং হতাশাজনক। কমিটি না হওয়ার ব্যর্থতা আমাদের সকলেরই। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে ছাত্রলীগের মাধ্যমে। কমিটি না থাকায় নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে না। কমিটি না থাকায় আওয়ামীলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের উপস্থিতিও হতাশাজনক।
খুলনা গেজেট/এইচ