রাজ্য ও দেশের কৃষক সমাজ ঘোর সঙ্কটে। তারা ফসলের ন্যূনতম সহযোগী মূল্য (এম এসপি) পাচ্ছেন না। কৃষি আইনের সর্বনাশা শ্রমকোড প্রত্যাহার করছে না। পাশাপাশি সর্বনাশা বিদ্যুৎ বিল-২০২০ প্রত্যাহার করছে না। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা পশ্চিমবঙ্গ ও সারা ভারতে মাস খানেকের বেশি সময় ধরে লড়াই-আন্দোলন করবে। কলকাতার হরেকৃষ্ণ কোঙারভবনে সংযুক্ত কিষাণ মঞ্চের বৈঠকের শেষ এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন মোর্চার রাজ্যকমিটির আহ্বায়ক অমল হালদার ও সচিব কার্তিক পাল। নেতৃবৃন্দ বলেন,
১) বর্তমান জাতীয় ও রাজ্যের কৃষি পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার আগামী কর্মসূচিগুলি এ রাজ্যে রূপায়িত হবে। আগামী ১ মাস ব্যাপী রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় নিবিড় প্রচার চালিয়ে নিম্নলিখিত কর্মসূচীগুলিকে সফল করে তুলতে হবে। গত ২৪ আগষ্ট দিল্লীর তালকোটরা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত “কিষান মজদুর কনভেনশন” থেকে এই কর্মসূচিগুলি গৃহীত হয়েছে, যাতে সংযুক্ত কিষান মোর্চার অন্তর্ভুক্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক সংগঠন, কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলি অংশগ্রহণ করে।
২) আগামী ৩ অক্টোবর দমন বিরোধী দিবস। এই উপলক্ষে সমস্ত জেলার ব্লকে/অঞ্চলে সভা মিছিল প্রভৃতি করতে হবে। গণআন্দোলনের উপর এবং প্রতিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সরকারের নামিয়ে আনা দমনপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। এই দিন লখিমপুর খেরিতে কৃষক হত্যা সংগঠিত হয়েছিলো। এ জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবী তুলে ধরা হবে।
৩) আগামী ২৬ – ২৮ নভেম্বর সারা দেশে রাজভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচী হবে। ২৭ নভেম্বর কলকাতার বুকে বৃহত্তর সমাবেশ কর্মসূচিতে রাজ্যের সমগ্র শক্তিকে সমাবেশিত করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন সহ অন্যান্য গণসংগঠন গুলির সাথে যৌথভাবে এই কর্মসূচি পালিত হবে। স্থান সময় প্রভৃতি বিস্তারিত বিষয়গুলি সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলির সাথে আলোচনা করে পরে জানানো হচ্ছে।
৪) সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার রাজ্য কনভেনশন অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে কলকাতায় কেন্দ্রীয়ভাবে করা হবে। সম্ভাব্য স্থান- সুবর্ণ বনিক সভাগৃহ। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি পৃথকভাবে কনভেনশন করার প্রচেষ্টা চালাবে।
৫) বর্তমান পরিস্থিতির যে মূল মূল দিকগুলি নিয়ে আমরা প্রচার অভিযান সংগঠিত করবো তা হলো – সারা দেশ জুড়ে কৃষক ও কৃষি সংকট এ রাজ্যের বু্কে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের চাপে মোদী সরকার তিন কৃষি আইন স্থগিত রাখতে বাধ্য হলেও কৃষির কর্পোরেটমুখী পুনর্গঠন জোরালো হয়ে চলেছে। এমএসপি গ্যারান্টি আইন,ঋণমুক্তি, শস্যবীমা,ফসলের ক্ষতিপূরণ সহ কৃষক আন্দোলনের প্রধান দাবীগুলিকে কোন মান্যতাই দেওয়া হচ্ছে না। উল্টে কৃষিতে বরাদ্দ অর্থের পরিমান কমিয়ে দিয়ে কর্পোরেটদের বিপূলপরিমানে কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি কৃষি পণ্যের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা কৃষকের স্বার্থবাহী নয়, বরং দেশের বুকে কোম্পানি বানিজ্য ও মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিচালিত।
৬) এ রাজ্যে অনাবৃষ্টির কারনে ফসলের বিপূল ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। অবাধে চলছে সারের কালোবাজারি মজুতদারি। বিদ্যুৎ এর মাশুল বৃদ্ধি, ভূপৃষ্ঠ সেচের কোন পরিকল্পনা না থাকা চাষীদের সংকট তীব্রতর করে তুলেছে। ফসলের কোন ক্ষতিপূরণ চাষীরা পায় না। এই রাজ্যে এমএসপি আইন প্রনয়নের প্রস্তাব সরকার সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চলেছে। জমির রেকর্ড নিয়ে কারচুপি ও অবৈধ কার্যকলাপ ভূমি দপ্তরের মদতে ঘটে চলেছে। লাগাতার কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে চলেছে। রাজ্যের সিংহভাগ কৃষি জমিতে চাষাবাদ করছে ছোট ভাগ ও লিজ চাষীরা, এদের সরকারী স্বীকৃতি ও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার দাবী,পাশাপাশি ফসলের লাভজনক দাম ও সরকারী ক্রয়ের দাবীগুলি খুবই জ্বলন্ত। ১০০ দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য কাজিয়া ও টালবাহানায় বঞ্চিত হয়ে চলেছেন কর্মহীনতায় আক্রান্ত গ্রামীণ মজুরেরা।
৭) মোদী সরকার তার সার্বিক সংকট মোচনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চক্রান্ত করে চলেছে। এই ঘৃণ্য রাজনীতির বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন সাফল্যের সাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়টাকে আমাদের প্রচারে তুলে ধরতে হবে এবং পাল্টা প্রস্তুতি গড়ে তুলতে হবে।
খুলনা গেজেট/ এএজে