শনির দশা ভর করেছে দিঘলিয়ায় মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজে। একই সঙ্গে কাজ শুরু হওয়া সারা দেশে আড়াই’শ মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে উদ্বোধন হয়েছে। অথচ কার্যাদেশের ৪ বছর পরও দিঘলিয়ার বহু প্রতিক্ষিত মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ৪ বছরে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ। কাজের এই হতাশাজনক অগ্রগতির জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়ী করা হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এমতাবস্থায় ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহবানের প্রক্রিয়া চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
সারা দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক নাজিবর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, আমাদের এখন আর ফান্ডের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে জমি পাওয়া নিয়ে। প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে আড়াই,শ মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যেগুলো ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। ষষ্ঠ ধাপের ৫০ টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ১৬ জুন টিচবি-মামুন (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিঘলিয়া মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তারা নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে পারেনি। তাদের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা কমিশন থেকে এ সংক্রান্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে। খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১ থেকে আগামী দেড় মাসের মধে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। ঠিকাদারের রেট বাড়ানোর আবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, রেট বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন আপনার সঙ্গে কাজের চুক্তি হয়েছে ১০ টাকা। আপনাকে কেন ১৫ টাকা দেবো?
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল্লাহ খুলনা গেজেটকে বলেন, ইউএনও হিসেবে এ উপজেলায় যোগদানের পর আমি যতটুকু দেখেছি ঠিকাদারের গাফিলাতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অপেশাদারিত্বের কারণে নির্মাণ কাজে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, ঠিকাদার কাজ শেষ না করে কিভাবে সময় বাড়িয়ে আরো বর্ধিত বাজেটের মাধ্যমে রি-সিডিউলের মাধ্যমে কাজ করা যায় সে চেষ্টা করেছেন। গত ৫ মাসে ৫ শতাংশও কাজ হয়নি। নির্মাণ সামগ্রী দাম বেড়েছে। কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে এগুলো অজুহাত মাত্র।
মডেল মসজিদে নির্মাণ কাজের বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা গণপূর্ত বিভাগ -১ ‘র নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস খুলনা গেজেটকে বলেন, কাজের গুণগতমান বজায় রেখে আমরা ঠিকাদারকে বারবার তাগিদ দিয়েছি কাজটি দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার জন্য। কিন্তু ঠিকাদার কাজটি যথা সময়ে সম্পন্ন করতে করতে পারেনি। যার কারণে বর্তমান ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহবানের সিদ্ধান্ত হয়েছে । খুব দ্রুতই টেন্ডার আহ্বান করা হবে। আশা করি নতুন টেন্ডারের পর দ্রুত গতিতে কাজটি সম্পন্ন হবে।
মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের ঠিকাদার মোঃ মনিরুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে বলেন, জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে কার্যাদেশ পাওয়ার তিন বছর পর আমাদের কাজ শুরু করতে হয়েছে। সর্বশেষ নিজেদের টাকা দিয়ে জমি কিনে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে আমরা পাইল ভরাট করে ফ্লোর এবং কলম ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছি। তিনি বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমরা অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। কাজের রেট বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে আমরা আবেদন করেছি।
প্রসঙ্গতঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬৪ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা সদরে ৩১ শতক জায়গার উপর সোয়া ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়। ২০১৯ সালের ১৬ জুন খুলনা গণপূর্ত বিভাগ -১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী টিচবি-মামুন (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করে। কাজের মেয়াদ উল্লেখ করা হয় ১৮ মাস। অর্থাৎ কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা।
সারাদেশে এ, বি, সি তিন ক্যাটাগরিতে এ সকল মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। খুলনার চারটি উপজেলাতে মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে বি ক্যাটাগরিতে। বি ক্যাটাগরির মসজিদগুলোর আয়তন হবে ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪০ বর্গমিটার।
মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী ও পুরুষদের পৃথক ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা থাকবে। সঙ্গে থাকবে লাইব্রেরী গবেষণা ও দীনি দাওয়াত কার্যক্রম, পবিত্র কুরআন, হেফজ, শিশুশিক্ষা অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা। থাকবে হজ্ব যাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য থাকবে অফিসের ব্যবস্থা।
জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২ শ মানুষ নামাজ পড়তে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯ শ মানুষের নামাজের ব্যবস্থা থাকছে।
নান্দনিক নির্মাণশৈলীতে নির্মিত এসব মডেল মসজিদে রয়েছে একটি করে মিনার।
খুলনা গেজেট/এইচ