খুলনার কয়রায় মহারাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শোক সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির মধ্যে মতবিরোধ হয়।
এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ”উসকানি মুলুক বক্তব্য দেবেন না। অনেক করেছেন। দলটাকে আর বারো বাজাবেন না।”
এই ঘটনার ২মিনিট ৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল বুধবার(২৩ আগষ্ট) উপজেলার কালনা আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সভায় এঘটনা ঘটে।
সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগনেতারা জানান,সভা মঞ্চ থেকে বক্তব্যর জন্য স্হানীয় সংসদ সদস্যর নাম ঘোষণা করলে তার অনুসারীরা শ্লোগান দিতে শুরু করেন। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্লোগান বন্ধের আহবান জানান। কিন্তু তার আহবানে সাড়া না দিয়ে শ্লোগান অব্যাহত রাখেন এমপি অনুসারীরা। পরবর্তীতে সংসদ সদস্য বাবু তার বক্তৃতাকালে শ্লোগানধারী তার অনুসারীদের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করেন। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রতিবাদ জানালে তাৎক্ষণিক স্থানীয় সংসদ সদস্য বক্তৃতা শেষ করেন।
এবিষয় আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্য পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ রয়েছে। সে কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলিয় নেতাকর্মীদের মনের শক্তি ফিরে পেতে সাতটি ইউনিয়নে শোক সভার আয়োজন করেছি। প্রোগ্রাম গুলো দেখে জনগনও বুঝবে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা এক।এখানে কেউ কারোর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া যাবে না। উনি(এমপি) প্রোগ্রামে বারবার দশ বারোটা ছেলে নিয়ে যায়। উনি(এমপি) যখন বক্তব্য দেয় তখন ওই ছেলে গুলো শুধু স্লোগান দেয়। জেলার সিনিয়র নেতাকর্মীদের বক্তব্যের সময় ওই ছেলে গুলো শ্লোগান দেয় না। তাহলে দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের অপমান করা হয়। এই ব্যাপারটা এমপি সাহেব বুঝতে চাননা। গতকালকের প্রোগ্রামের সময় স্বল্পতার কারণে আমিও তিন মিনিটের বেশী বক্তব্য দিতে পারনি। বক্তৃতার জন্য এমপির নাম ঘোষণার সময় তার অনুসারী দশ বারোটা ছেলে শ্লোগান শুরু করলে আমি নিষেধ করি। কিন্তু তারা আমার কথা না শুনে শ্লোগান দিতে থাকে। পরে এমপি’র বক্তৃতাকালে তিনি উস্কানি মূলুক বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন। এসময় আমি প্রতিবাদ করি।
জি এম মোহসিন রেজা আরও বলেন, এমপি হচ্ছে দলের ফসল।নেত্রী বরাদ্দ দিলে পূর্বে আমরা দেখেছি দলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের নিয়ে বসে আলোচনা করে নেন। কিন্তু উনি(এমপি) ঘরে বসে বসে তার অনুসারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করেন। কোথায় উন্নয়ন করেছে আমরা জানি না। উনি এমপি হয়েছেন দলের কারণে ব্যক্তিগত কারণে না। টিআর,কাবিখা,কাবিটা, পানির ট্যাংক ও টিউবওয়েল কোথায় দিচ্ছে তাও আমরা জানি না। এসব বিক্রি করে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে আর দলের নেতাকর্মীদের ভিক্ষা করে খেতে হবে।
মতবিরোধকালে মঞ্চে উপস্থিত থাকা খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জি. প্রেম কুমার মন্ডল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটা নিজেদের মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝি। পরবর্তীতে প্রোগ্রাম শেষে সকলে এক সাথে চা খেয়েছি। বিষয়টি মিমাংশা হয়ে গেছে।
শোক সভায় উপস্থিত থাকা খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সোহরাব আলী সানা বলেন,
উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আগামী সংসদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ করতে কয়রায় উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সাতটি ইউনিয়নে শোক সভা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।পাঁচটি ইউনিয়নে শোক সভা সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রতিটি প্রোগ্রামে স্হানীয় সংসদ সদস্য তার কিছু অনুসারী নিয়ে আসেন।তারা শুধু এমপি সাহেবের বক্তব্যের সময় শ্লোগান দেয়। জেলার আর কোন নেতার সময় তারা থাকে না। এটা দলের জন্য খুবই বিব্রতকর।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুর ব্যক্তিগত মুঠোফোন (০১৭১১৯৮১৩৯১) ২৪ আগস্ট সকালে বেশ কয়েকবার কল দিলেও রিসিভ হয় নাই।পরবর্তীতে সকাল ১১ টা ৫২ মিনিটে খুদে বার্তা পাঠালেও কোন উত্তর মেলেনি।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদুল