খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ মাঘ, ১৪৩১ | ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ন্যূনতম সংস্কার শেষে নির্বাচন চাই : ফখরুল
  নাটোরে লালপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩ স্কুলশিক্ষার্থী নিহত

‘প্রতিটিক্ষণ ছিল সন্ত্রাসীদের ভয়, মৃত্যুর ভয় ও দুর্ঘটনার ভয়’

গে‌জেট ডেস্ক

Sufiul anam

‘আমি এত দিন যে পরিবেশে ছিলাম সেটা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এগুলো সিনেমাতে দেখা যায়; কিন্তু বাস্তবে এই অভিজ্ঞতা সবচেয়ে কঠিন। আমি ছিলাম পাহাড়ের ভেতর ও মরুভূমির মধ্যে। মাসের পর মাস আমি আকাশ-বাতাস দেখতে পাইনি।

পাহাড়ের ভেতর ও মরুভূমির মাঝখানে চলছিল আমার দুদর্শাময় জীবন।’
আজ বুধবার ইয়েমেনে আল-কায়েদার হাতে অপহৃত জাতিসংঘের কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) সুফিউল আনামকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশে পৌঁছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমাকে সবাই ভুলে গেছে।

আমি পুরো হতাশাগ্রস্ত একজন মানুষ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আপনাদের সকলের উপস্থিতি দেখে আমার মনে হচ্ছে আমাকে কেউ ভোলে নাই। আমি এক বছর ছয় মাস ধরে অপহরণ হয়ে ছিলাম। আমাকে অপহরণ করে নিয়ে আমার দেশ, সমাজ, ভাষা ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল।
আমার সব সময় মনে হতো যে আমি আর বাঁচব না বা ফিরতে পারব না। যেকোনো বিপদসংকুল মুহূর্তে তারা আমাদের হত্যা করে পালিয়ে যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি বর্ণনা করতে পারব না সে কষ্টগুলো। অত্যন্ত বিপদসংকুল অবস্থায় আমি সময় পার করেছি। প্রতিটিক্ষণ ছিল আমার সন্ত্রাসীদের ভয়, মৃত্যুর ভয় ও দুর্ঘটনার ভয়।

আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যখন ফিরছিলাম তখন এক চেকপোস্টে অস্ত্রের মুখে আমাদের অপহরণ করা হয়। তারপর সেখান থেকে নিয়ে পাহাড়ের এক শেল্টে রাখা হয়। আমাদের ভাগ্য ভালো যে তারা আমাদের ওপর থেকে কোনো ধরনের নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার করেনি। তারা শুধু আমাদের চোখ বেঁধে পাহাড়ের মাঝখানে শেল্টারে নিয়ে যায়। যত দিন আমাদের এখানে রাখা সম্ভব ছিল তত দিন তারা এখানে রাখে। তারপর তারা আমাদের ওখান থেকে নিয়ে মরুভূমিতে এক ট্যান্টের মধ্যে রেখে দেয়। এভাবে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয়। এই দেড় বছরে আমাদের ১৮ বার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মোট ১০টি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু এই জায়গাগুলা কোথায় সেটা আমরা বলতে পারব না। কারণ যতবারই আমাদের সরানো হয়েছে ততবারই আমাদের চোখ বাঁধা অবস্থায় ছিল। আমরা শুধু এটুকু বুঝতে পারছিলাম প্রথমে আমরা ছিলাম পাহাড়ের ভেতর, পরে ছিলাম মরুভূমির মাঝখানে।’

প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সুফিউল আনাম বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা আমার উদ্ধার কাজে নিয়োজিত হয়। তারা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে আমাকে ও আমার চার সহকর্মীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। আমি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। একমাত্র তার পক্ষেই সম্ভব তার একজন নগণ্য দেশবাসীকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করা। আমি যখন এনএসআই সদস্যদের সাথে গতকাল মিলিত হলাম তখনই আমার মনে বিশ্বাস স্থাপন হয়েছেন যে আপনারা আমাকে ভোলেন নাই। আমি এনএসআইয়ের পরিচালকসহ সকল কর্মকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে আমি উদ্ধার হতে পেরেছি। আমি এনএসআইয়ের এই দায়িত্বপূর্ণতা কখনো ভুলব না। আমি তাদের এই ঋণ কখনো পরিশোধ করতে পারব না।’

লে. কর্নেল (অব.) সুফিউল আনামের সঙ্গে এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক মোহাম্মদ ইমরুল মাহবুদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুফিউল আনাম স্যারের অপহরণের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা আমাদের ওপর ছিল। এটা এক দিনেই সম্ভব হয়নি। এটা অত্যন্ত প্রতিকূল ও দুরূহ কাজ ছিল। আমরা দীর্ঘদিন এটা নিয়ে কাজ করেছি। এ কাজের সময় আমাদের বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশ, ভাতৃপ্রতিম সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি অনেকের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সত্যি কথা বলতে প্রধানমন্ত্রীর আমাদের প্রতি আস্থা ছিল যে আমরা এ কাজটায় সফল হব। আমরা প্রধানমন্ত্রীর আস্থা রাখতে পেরে গর্ববোধ করছি। ভবিষ্যতেও আমরা জাতীয় নিরাপত্তার বিভিন্ন স্বার্থে কাজ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ওরা আমাদের কাছে ৩০ লাখ মার্কিন ডলার চেয়েছিল। কিন্তু আমরা স্যারকে কোনো ধরনের মুক্তিপণ ছাড়াই উদ্ধার করতে পেরেছি। এটাই আমাদের বড় সাফল্যের অংশ।’

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাতিসংঘের কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) সুফিউল আনামের সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার অতিরিক্ত পরিচালক বদরুল হাসান, উপপরিচালক বদরুল হাসান বিদ্যুৎসহ সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!