নারীদের শালীনতা বজায় রেখে চলাফেরার পরামর্শ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া অভিনেতা অনন্ত জলিল বলেছেন, গতকালের ভিডিওতে আমি মূলত মেয়েদেরকে শালীনতা বজায় রাখার জন্য বলতে চেয়েছি। অনেকেই বিষয়টিকে পজিটিভভাবে নিয়েছেন, আবার অনেকেই নেগেটিভ ভাবে নিয়েছেন, আমি কোনো বিতর্কে জড়াতে চাই না। কেউ ভুল বুঝে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। তাই আমি উক্ত বিষয়টি কারেকশন করে দিলাম।রোববার সন্ধ্যায় দেয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন। ওই স্ট্যাটাসের সঙ্গে নতুন আরেকটি ভিডিও যুক্ত করে দেন।
দেশের আলোচিত অভিনেতা অনন্ত জলিল বলেন, নারী-পুরুষ উভয়েই পরিবার ও সমাজের জন্য অনিবার্য। পরিবার টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন নারী-পুরুষের সম্মিলিত উদ্যোগ, পরিকল্পনা, ত্যাগ ও সংযমের প্রয়োজন। একজনকে উপেক্ষা করে বা বাদ দিয়ে কেবল পুরুষ কিংবা নারীর পক্ষে বেশিদূর এগোনো সম্ভব নয়। তাই আমরা চাই নারী-পুরুষের সৌহার্দ্যপূর্ণ সমঝোতামূলক সম্পর্ক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক ।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ, বিশেষ করে শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েই চলেছে। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর দ্রুততম সময়ে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প কিছু নেই। পরিবারের দায়িত্ব নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা।
এর আগে নারীদের শালীনতা বজায় রেখে চলাফেরা করার পরামর্শ দেয়া অভিনেতা অনন্ত জলিলকে বয়কটের ঘোষণা দেন অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।রোববার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী শাওন তার ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন, ‘আমি মেহের আফরোজ শাওন, বাংলাদেশের একজন চলচ্চিত্র ও মিডিয়াকর্মী এবং স্বাধীনসার্বভৌম রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিক হিসাবে বাংলাদেশের নারীদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং অসংলগ্ন বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও বার্তা দেয়ার জন্য জনাব অনন্ত জলিলকেবয়কট করলাম’।
তার এ বক্তব্যে ৮ হাজার লাইক, ৪ হাজার লাভ রিয়েক্ট পড়েছে। হা হা রিয়েক্ট পড়েছে ৩৯৯টি। তবে মন্তব্য পড়েছে মাত্র ৪৮টি। মন্তব্য অপশনটি পাবলিক করা হয়নি।শুধু নির্ধারিত অডিয়েন্সেই মন্তব্য করার সুযোগ পেয়েছেন।
অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি তার মন্তব্যে শাওনের উদ্দেশে লেখেন, ‘আপনি কি ছিলেন তার সাথে?? আমার অবশ্য বয়কটের বাড়তি পেইনটা নিতে হল না!’
ফেসবুকে তার টাইমলাইনের দেয়া ওই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে প্রীতি নামের একজন তার মন্তব্যে লিখেন, ‘মেয়েরা কী পরবে কী পরবে না এটা তার নিজস্ব পছন্দ।
এটাকে যদি কেউ ধর্ষণের কারন হিসাবে তৈরি করে। জনগনের মনে আরও মানসিক বিকার তৈরি করে তবে তার স্থান জেলখানা হওয়া উচিৎ। মানসিকতা না পরিবর্তন হলে এদেশে রেপ কালচার থামবে না। ফাঁসির সঙ্গে সঙ্গে এ আইনটাও জরুরি যে কেউ মেয়েদের পোশাক, চলাফেরা, রাতে দেরিতে বাড়ি ফেরা, চাকরি বা ব্যবসা করা নিয়ে কথা কোন নেগেটিভ কথা বলতে পারবে না। বললেই ৩ মাসের জেল। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাকা করতেই হবে। মানসিকতা পরিবর্তন কর না হলে জেলে থাক। কারণ এরাই উসকে দেয়।’
প্রসঙ্গত, খোলামেলা পোশাক পরে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে নারীদের উদ্দেশে অভিনেতা অনন্ত জলিল বলেছেন, এ ধরনের পোশাকের কারণে মানুষ আপনার মুখের পরিবর্তে আপনার শরীর দেখে। তারা অশ্লীল মন্তব্য করে এবং ধর্ষণের কথা চিন্তা করে।
শনিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করেন অনন্ত জলিল।৬ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে নারীদেরকে নিজের ‘ভাই হিসেবে’ কিছু পরামর্শ দিতে শোনা যায় এই অভিনেতাকে।ভিডিওটি তার স্ত্রী বর্ষার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও পোস্ট করা হয়।
অনন্ত জলিল বলেন, ‘নারীরা (বাংলাদেশে) অশালীন পোশাক পরেন অন্য দেশের নারী, সিনেমা, টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে। এ ধরনের পোশাকের কারণে মানুষ আপনার মুখের পরিবর্তে আপনার শরীর দেখে। তারা (নারীদের সম্পর্কে) অশ্লীল মন্তব্য করে এবং ধর্ষণের কথা চিন্তা করে। আপনারা কি (নারীরা) নিজেকে আধুনিক বলে গণ্য করেন? আপনি যে পোশাকটি পরছেন তা কি আধুনিক নাকি অশ্লীল? একটি আধুনিক পোশাক বলতে কেবল আপনার মুখ দেখানো এবং শালীন পোশাক দিয়ে আপনার শরীর আবৃত থাকা বুঝায় যেটিতে আপনাকে সুন্দর দেখায়।’
তিনি আরও বলেন, মুখ ব্যতীত পুরো শরীর আবৃত হয় না এমন যেকোনো পোশাকেই নারীদের ‘অত্যন্ত খারাপ’ দেখায়।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘ছেলেদের মতো টি-শার্ট পরে আপনি রাস্তায় নামবেন এবং যখন সেখানে অসম্মানিত বা ধর্ষিত হয়ে ঘরে ফিরে আসবেন তখন হয় আপনি আত্মহত্যা করতে পারেন অথবা প্রকাশ্যে আপনি মুখ দেখাতে পারবেন না।’
‘শালীন’ পোশাক ধর্ষণ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা নিবৃত করবে উল্লেখ করে অনন্ত বলেন, ‘আপনি যদি শালীন পোশাক পরেন তাহলে মানুষ আপনাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখবে।’
ভিডিওর শুরুতে ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন অনন্ত জলিল।ধর্ষণ করার আগে পুরুষদের দুবার ভাবার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি আপনার স্ত্রী, বোনের সঙ্গে একই ঘটনা ঘটে তাহলে আপনি কী করবেন?’
খুলনা গেজেট/এনএম