লাগাতার বৃষ্টি ও প্রবল জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের চিংড়ি চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে জেলার কয়েক হাজার চিংড়ি ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষীরা। এবারের বৃষ্টিতে কৃষি ক্ষেত্রে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। তবে মঙ্গলবার (০৮ আগস্ট) সকাল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায়, কিছু কিছু এলাকার পানি কমতে শুরু করেছে। জলাবদ্ধতার শিকার পরিবারের সংখ্যাও কমেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গেল কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জেলায় ৪ হাজার ২৩০টি মৎস্য ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। এতে চাষীদের ১ কোটি ৭৮ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৩৭৫টি, কচুয়ায় ৬৪০টি, শরণখোলায় ১০০টি, রামপালে ১ হাজার ৫৪০টি, মোরেলগঞ্জে ৮৫৫টি এবং মোংলায় ৭২০টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮২৫ একর জমিতে থাকা ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যের বাইরেও বেশকিছু ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে দাবি মৎস্য চাষীদের।
রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়নের তালপুকুর এলাকার ঘের চাষী রমজান আলী বলেন, জোয়ারের পানিতে তেমন প্রভাব ফেলতে না পারলেও, বৃষ্টির পানিতে আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। বেরি তলিয়ে ঘেরের মাছ সব বের হয়ে গেছে।
বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেন, পানিতে অনেকেরই ঘের তলিয়ে গেছে। কারও কারও ঘেরের বেরি ভেঙ্গে গেছে। আমার নিজের ঘেরও তলিছে। এক কথায় আমার ইউনিয়নের মাছ চাষীরা বেশ বিপদে পড়েছে বৃষ্টিতে।
বাসতলী এলাকার ঘের চাষী সাবেক উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আবু সাইদ বলেন, বৃষ্টির পানিতে সব একাকার হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি মাঠ থেকে নামতে পারেনি, কারণ নদী-খালে পানিতে পরিপূর্ণ যার ফলে ঘেরগুলোর অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার সবগুলো ঘের ডুবে গেছে।
এদিকে সকাল থেকে বৃষ্টি না থাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন সড়কের উপর থাকা পানি নেমে গেছে। জলাব্দতার শিকার পরিবারের সংখ্যাও কমেছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, রবিবার পর্যন্ত ৭ হাজার ৫১০টি পরিবার পানিবন্দি ছিল। সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায়, অনেক এলাকার পানি নেমে গেছে। বিকেল পর্যন্ত ৫ হাজার ৩৬৩টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। রাতে যদি বৃষ্টি না হয়, আসাকরি তারাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী বৃষ্টির পানিতে জেলার ৪ হাজার ২৩০টি ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। এতে আমাদের চাষীদের ১ কোটি ৭৮ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা যাতে পুনরায় মাছ চাষ করে ক্ষতিপুষিয়ে নিতে সেজন্য পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদুল