খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীতে ফার্মগেটে বণিজ্যিক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিট কাজ করছে
  গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহত
  ঝিনাইদহে ২ ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালকের মৃত্যু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট
২৪ ঘন্টায় ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত

বাগেরহাটে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি সাড়ে ৭ হাজার পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত, এক কথায় পুরো জেলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গেল ২৪ ঘন্টায় ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে মোংলা আবহওয়া অফিস। যা রবিবারের থেকে ৮৯ মিলিমিটার বেশি। অবিরাম বৃষ্টিতে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাটা খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা। জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন ৭ হাজার ৫১০টি পরিবার। ১ হাজার ৫৮০টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

সরেজমিনে বাগেরহাট পৌর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের মিঠাপুকুরপাড়, খানজাহান আলী সড়ক, শালতলার মোড়, সাধণার মোড়, রাহাতের মোড়, মাছবাজার, কাঁচাবাজার, চালপট্টী, পুরাতন বাজার মোড়, বাসাবাটি, সাহাপাড়া, খানজাহান পল্লী-গোবরদিয়া, খারদ্বার, ভূমি অফিস মোড়সহ বাগেরহাট পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশকছিু সড়কে হাটু পর্যন্ত পানি ছিলো।

মিঠাপুকুর পাড় এলাকা দিয়ে যাওয়া রিকশা চালক আলমগীর হোসেন বলেন, গেল সাতদিন ধরে বৃষ্টিতে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি। সকাল থেকে মুশুল ধারায় বৃষ্টি হওয়ার পরেও, রিকশা নিয়ে বেড়িয়েছি। লোকজন নেই, তারপরও দুই চারজন যা পাচ্ছি এই দিয়েই আজকের বাজার হবে।

ওয়ালটনের বিক্রয়কর্মী শঙ্কর ঢালী বলেন, বৃষ্টির জন্য আমাদের মত বিক্রয়কর্মীদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ বাইরে আসতে পারে না। যার ফলে আমাদের বিক্রয় কম হয়। প্রাইভেট চাকুরী, প্রতিদিন জবাবদিহিতা করতে হয় আমাদের।

বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়া ও জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে বাগেরহাট প্রেসক্লাবের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বলেন, ড্রেনগুলো বন্ধ থাকার কারণে সহজেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেনগুলোতে অবৈধভাবে দোকান পাট দিয়ে বসেছে। সরকারের উচিত ড্রেনগুলোকে দখলমুক্ত করা। পৌরসভার পক্ষ থেকে ড্রেনগুলো পরিস্কার করলে, জলাবদ্ধতা কম হবে বলে মনে করেন তিনি।

শুধু বাগেরহাট পৌরসভা নয়, টানা বৃষ্টিতে মোংলা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক, বাজার এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভোগান্তি পড়েছেন ওই এলাকার মানুষ। মোংলা পৌরসভার মুসলিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাহমুদ হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় হাটু পানি জমে গেছে। ড্রেনগুলো থেকে পানি সরে না। আমরা কয়েকজন লাঠি নিয়ে ড্রেনগুলো পরিস্কার করে পানি সরানোর চেষ্টা করছি।

মোরেলগঞ্জ পৌর এলাকার আমজেদ হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানি সহজে নামতে না পাড়ায়, মোরেলগঞ্জ বাজার, বারুইখালী, উপজেলা পরিষদ চত্বর, কুঠিবাড়ি, এসিলাহা স্কুল, এসএম কলেজ, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, সেতারা আব্বাস টেকনিক্যাল কলেজ, রওশোনআরা ডিগ্রি কলেজ, আজিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ পৌরসবার বেশিরভাগ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। অনেকের পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে। পানিবন্ধি রয়েছে অনেক পরিবার। পৌর এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভাল থাকল বৃষ্টির পানি এত বেশি জমতে পারত না বলে জানান তিনি।

এদিকে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও কচুয়ার বেশকিছু এলাকায় মৎস্যঘের ডুবে মাছ বের হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৎস্য চাষীরা নেট ও পাটা দিয়ে মাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন। বৃষ্টি দু-একদিন স্থায়ী হলে এসব এলাকার বেশিরভাগ ঘের ডুবে যাবে বলে দাবি মাছ চাষীদের।

রামপাল উপজেলার হুড়কা গ্রামের সুজন মজুমদার বলেন, ঘেরের তিন পাশে নেট দেওয়া ছিল। একপাশে নেট দিতে পারিনি। পানিতে ডুবে যাওয়ায় ওইপাশ দিয়েই মাছ বেরিয়ে গেছে। শুধু আমার ঘের নয়, এলাকার অনেকের ঘের ডুবে মাছ বেরিয়ে গেছে। রাস্তাঘাটও পানির নিচে রয়েছে।

তবে এই বৃষ্টিতে কৃষি মাঠে থাকা সবজি ও ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি। বরং আমন ধানে বীজতলা ও সবজি ক্ষেতের উপরকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে, ঘেরের পাড়ে থাকা সবজির ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, পূর্নিমার জোয়ারের প্রভাব কেটে যাওয়ায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। কোন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে না। তবে বৃষ্টির পানি সাধারণ মানুষকে খুব ভোগাচ্ছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাঃ খালিদ হোসেন বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ভারি বৃষ্টিতে জেলার ৭ হাজার ৫১০টি পরিবার জলবদ্ধতার শিকার হয়েছেন। ১ হাজার ৫৮০টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও অসহায় মানুষদের খোজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

খুলনা গেজেট/মাসুদুল হক/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!