খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি জাফর আউলিয়া ডিগ্রি মাদ্রাসার বহু বিতর্কিত অধ্যক্ষ হাফেজ মাওঃ আবদুস সাত্তার এবার ঘুষিতে নাক ফাটালেন একই প্রতিষ্ঠানের আরবি প্রভাষক মো. আল-আমিন এর। ঠুনকো অযুহাতে ক্লাস থেকে ডেকে টিচার্স কমনরুমে নিয়ে সহকর্মীদের সামনেই বাক্-বিতন্ডার একপর্যায়ে তিনি ঘুষি মেরে নাক ফাটান ওই প্রভাষকের। এসময় রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কপিলমুনি হাসপাতাল ও পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার খবরে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সরেজমিনে মাদ্রাসায় গেলে টিচার্স কমনরুমে প্রভাষক মো. আল-আমিন এ প্রতিনিধিকে জানান, দুপুর ১২ টার দিকে তিনি ৯ম শ্রেণির ক্লাসে পাঠদান করছিলেন, এসময় মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাও: আব্দুস সাত্তার মোবাইল ফোনে জরুরি ভিত্তিতে তাকে তার রুমে ডাকেন। তিনি তাৎক্ষণিক শিক্ষক রুমে প্রবেশ করতেই জনৈকা শিক্ষার্থীকে নিয়ে তার অভিভাবকদের কাছে মিথ্যা নালিশের কৈফিয়ৎ তলব করে বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে প্রিন্সিপাল সহকর্মী শিক্ষকদের সামনেই আল-আমিনের মুখে-মাথায় চড়, কিল ঘুষি মারতে উদ্যত হন। একপর্যায়ে একটি ঘুষি তার নাকে লাগলে মূহুর্তেই নাক ফেঁটে ব্যাপক রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
এর কিছুক্ষণ পর সহকর্মীসহ উপস্থিত সংবাদকর্মীরা তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কপিলমুনি হাসপাতালে নিলে সেখানে ডাক্তার না থাকায় পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রভাষক আল-আমিন আরো বলেন, ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারী মাদ্রাসায় যোগদানের আগে থেকে প্রিন্সিপাল তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে আসছেন। এছাড়া তিনি তার সাথে আত্মীয়তার প্রস্তাবে ব্যর্থ হয়ে সেই প্রথম থেকেই ছোট-খাট নানা বিষয় নিয়ে মানসিকভাবে লাঞ্ছিত ও চাকুরি থেকে তাড়াতে নানাবিধ হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে ক্লাস থেকে ডেকে নিয়ে এলোপাতাড়ি চড়, কিল, ঘুষিতে তার নাক ফাঁটিয়েছেন।
এদিকে প্রভাষক আল-আমিন পার্শ্ববর্তী কাশিমনগর বাজার জামে মসজিদের খতিব। তার আক্রান্তের খবরে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ কবিরুল ইসলামসহ মুসল্লিরা মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে ঘটনায় বিচার দাবি করেন। এসময় শেখ কবিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি দু:খজনক। তিনি এর বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, ঘটনায় তিনি হতবাক হয়েছেন। তারা সেখানে চাকরি করতে গেছেন, মার খেতে যাননি বলেও মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, তিনি কারণে-অকারণে বিভিন্ন সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন।
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে নানা দূর্নীতি-অনিয়মের পাশাপাশি মাদ্রাসা টাইমে মাদ্রাসা চত্ত্বরে চেম্বার নিয়ে কবিরাজি, হেকিমি ব্যবসার অন্তরালে মহিলা রোগীদের সাথে অসদাচারণসহ বহুবিধ অভিযোগে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রচার হয়।
সর্বশেষ ঘটনায় অধ্যক্ষ মাওঃ আবদুস সাত্তার বলেন, অভিভাবকের অভিযোগ পেয়ে আমার মাথা ঠিক ছিল না, অসাবধানতাবশত তার নাকে লেগে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়েছে এর জন্য ভুল স্বীকার করেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা নিতিশ চন্দ্র গোলদার বলেন, নাকের আঘাতটা ভারী ও রোগী আসতে বিলম্ব হওয়ায় রক্তক্ষরণ বন্ধ হতে সময় নিচ্ছে। তবে তিনি অনেকটাই আশংকামুক্ত বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, বিষটি তিনি শুনেছেন, আগে চিকিৎসা নিতে বলেছেন বলেও জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম