খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সিইসিসহ নতুন নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আজ
  অ্যান্টিগা টেস্ট: ৪৫০ রানে ইনিংস ঘোষণা ওয়েস্ট ইন্ডিজের, দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৪০/২

ডেটলাইন- ২৭ জুলাই, শঙ্কা ও উত্তেজনায় রাজনীতি !

গে‌জেট ডেস্ক

ডেটলাইন- ২৭ জুলাই। রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিপরীত মেরুর দুই রাজনৈতিক শিবিরের কর্মসূচিকে ঘিরে এই সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই দিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিএনপির তরফ থেকে সংঘাতের আশঙ্কা করে ক্ষমতাসীনদের কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। কোনও উসকানি দেবে না বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবে কেউ সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হলে সরকারি দল হিসেবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেবে তারা।

২৭ জুলাই রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। তাদের ভাষায়, সরকার পতনে তারা ওইদিন শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করবে। এদিকে একই দিনে ঢাকায় ‘শান্তি সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুটি সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। বিএনপি মহাসচিব গত ২২ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ থেকে ২৭ জুলাইয়ের কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। অপরদিকে সোমবার (২৪ জুলাই) আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী ও একটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যৌথ সংবাদ সম্মেলন ডেকে ২৭ জুলাই বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছে।

এর আগে যুবলীগ ২৪ জুলাই তাদের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতে বিভাগীয় ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল। প্রথমে তারা ওই কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করে ২৭ জুলাই পুনর্নির্ধারণ করে। পরে যুবলীগ ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ কর্মসূচিটি পরিবর্তন করে অন্য দুটি সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে একই দিনে এবং একই স্পটে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। যুবলীগ তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ ডেকেছিল ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীতকরণের লক্ষ্য সামনে রেখে। অপরদিকে ‘বিএনপি-জামায়াতের হত্যা-ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে তারা জানিয়েছে। এর আগে গত ২২ জুলাইও যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের যৌথ উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এবার ৫ দিনের ব্যবধানে একই ধরনের আরও একটি কর্মসূচির ডাক দিলো তারা। অবশ্য এবার তাদের সঙ্গে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে যুক্ত করেছে।

অভিযোগ উঠেছে, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ডাকার প্রেক্ষাপটে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে নতুন সিদ্ধান্ত এসেছে ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে।

পাল্টা কর্মসূচির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। রাজনৈতিক দল হিসেবে সহাবস্থানে থেকে তারা এ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবেন।

উল্লেখ্য, চলতি মাসে বিএনপি বা তার সহযোগী ও অঙ্গসংগঠন থেকে যেসব দিনে যে ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ব্যানারেও ঠিক একই দিনে একই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গত ১২ জুলাই দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে ‘যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের ১ দফা যৌথ ঘোষণার সমাবেশ’ করে বিএনপি। একই দিন বিকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ‘শান্তি সমাবেশ’ করে আওয়ামী লীগ।

এছাড়া ১৮ জুলাই মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ওই দিন ঢাকা মহানগরীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত বিএনপির পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন আওয়ামী লীগ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি পর্যন্ত ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ র‌্যালি করে। ১৯ জুলাই উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। একই দিনে তেজগাঁও সাত রাস্তা থেকে মহাখালী পর্যন্ত র‌্যালি করে আওয়ামী লীগ। ২২ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করে। একই দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ‘শান্তি সমাবেশ’ করে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। রাজধানী ছাড়াও অন্যান্য জেলা ও বিভাগীয় শহরে একই ধরনের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে দুই দল।

এসব কর্মসূচির বেশিরভাগই শান্তিপূর্ণ হলেও গত ১৮ জুলাই বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে মিরপুর বাঙলা কলেজের গেটে বিএনপির সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। একই দিনে লক্ষ্মীপুরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। ওই দিন বিএনপির সঙ্গে পুলিশেরও সংঘর্ষ হয়। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীতে বিএনপির কর্মসূচির দিনেও রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ করেছিল আওয়ামী লীগ।

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি রাজনৈতিক অঙ্গনে সংঘাত সৃষ্টির কোনও আশঙ্কা রয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিরোধী দলকে সম্প্রতি কর্মসূচি পালন করার অনুমতি দিতে দেখছি, যেটা কিছু দিন আগেও দেখা যায়নি। এটা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি—তাদের কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে একই দিনে আরেক কর্মসূচি হচ্ছে। এটি শুভ লক্ষণ নয়। সরকারি দল চাইলে তাদের কর্মসূচি আগে বা পরে পালন করতে পারে। যদি ধরেও নিই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নেই, কিন্তু একই দিনে দুই দলের নেতাকর্মীরাই মাঠে থাকলে এতে সংঘাতের আশঙ্কা থাকেই। তারা মিছিল-স্লোগান দেওয়ার সময় যেকোনও পক্ষের উসকানিতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। ভিন্ন সময়ে কর্মসূচি হলে এ ধরনের পরিস্থিতি যতটা এড়ানো সম্ভব, একই সময় হলে ততটা সম্ভব নয়।’

২৭ জুলাই দুই পক্ষের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘাতের কোনও আশঙ্কা নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে সংঘাতের কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তারা যদি সংঘাত ও সন্ত্রাসের পথে হাঁটে এবং অহেতুক পরিবেশ অশান্ত করতে চায়, তাহলে সংঘাত হতে পারে। এছাড়া কোনও সংঘাতের আশঙ্কা নেই।’

আওয়ামী লীগ থেকে কোনও উসকানি দেওয়া হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা কারও পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাই না।’

বিএনপি নিজেরাই সংঘাত সৃষ্টি করে সরকারের ওপর দায় চাপানোর জন্য দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আগাম মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

২৭ জুলাইয়ের সমাবেশকে ঘিরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনও সংঘাতের আশঙ্কা নেই বলে সোমবার এক অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোনও সংঘাতের সম্ভাবনা নেই। কোনও উসকানি আওয়ামী লীগ দেবে না। তবে কেউ সংঘাত করলে জনগণের জানমালের রক্ষায় আমরা প্রটেকশন দেবো।’

যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ২৭ জুলাই ক্ষমতাসীনদের কর্মসূচি বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ২৭ জুলাইয়ের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা করে সোমবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যুবলীগের কর্মসূচি ছিল ২৪ জুলাই। আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করার পর যুবলীগ তাদের কর্মসূচি ২৭ জুলাইয়ে নিয়ে গেছে। সংঘাতপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করতে তারা এটা করেছে, তা পরিষ্কার। কোনও ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’ বিএনপি মহাসচিব সরকারি দলকে তাদের সমাবেশের তারিখ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!