খুলনায় স্কুলছাত্রী সাবরিনা ইসলাম বেলা ওরফে মাহির মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে ।নিহতের পরিবারের দাবি, মেয়েটি সৎ পিতার লালসার শিকার হয়েছে। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলেছে, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ বৃহস্পতিবার ( ২০ জুলাই) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মৃত স্কুল ছাত্রীর বাবা মিলন মল্লিক টনি গোবরচাকা গাবতলা এলাকার বাসিন্দা। তিনি একজন পাখি ব্যবসায়ী। বাবা মিলন মল্লিক টনি জানান, বছর ১৫ আগে গোবরচাকা গাবতলা এলাকার আব্দুল রাজ্জাকের মেয়ে ফারজানা ইয়াসমিন বেনুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। পরে মেয়ে বেলার জন্ম হয়। একাধিক ব্যক্তির সাথে স্ত্রী বেলীর সম্পর্ক ছিল। একাধিকবার স্থানীয়ভাবে তাদের শালিস হয়েছে। সর্বশেষ তিন বছর পূর্বে তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে । পরে রিজভী নামে এক ব্যক্তির সাথে বেনুর বিয়ে হয়। মেয়ে বেলা তার মায়ের সাথে থাকত। কিন্তু বাবা ও কন্যার সম্পর্ক মধুর ছিল।
তিনি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুর সাড় ১২ টার দিকে বৃষ্টিতে ভিজে আমার মেয়ে বাড়িতে যায়। দুপুর ২টার দিকে আমার সাবেক স্ত্রী ফারজানা ইয়াসমিন বেনু তাকে ৫/৬ বার ফোন করে। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করেননি। এরপর মেয়ের মামা রাশেদ ফোন করে তাকে (টনি) জানায়, মেয়ে সাবরিন ইসলাম বেলা ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখে দিয়েছে।
এমন সংবাদ পেয়ে তিনি সাবেক শশুর বাড়িতে গিয়ে দেখেন মেয়ের ঘরের দরজা বন্ধ। তিনি মেয়েকে ডাকাডাকি করে সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে প্রতিবেশি এক ব্যক্তির সহায়তায় দরজা ভেঙ্গে ঘরের ভেতর গিয়ে দেখেন ফ্যানের সাথে তার সন্তানের দেহ ঝুলে আছে। ওই ব্যক্তির সহায়তায় মেয়েকে নিয়ে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখান থেকে পরে মেয়েকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ডিউটিরত চিকিৎসক মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।
টনি মল্লিক আরো বলেন, দরজায় গোল তালা লাগানো ছিল। যেটি ভেতর বা বাইরে থেকে লাগানো যেত। তিনি আরও বলেন, মেয়ে যখন ফ্যানের সাথে ওড়নায় ঝুলে ছিল তখন পাশে কোন চেয়ার বা কোন টেবিল ছিলনা।পরবর্তীতে যখন মেয়ের মরদেহ বাড়িতে আনা হয় তখন কে বা কারা ফ্যান থেকে ওড়না খুলে ফেলেন।
তিনি দাবি করে বলেন, মেয়ের বুকের ডানপাশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে আছড়ের চিহ্ন রয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে তার মেয়েকে পাশবিক নির্যাতনের চেষ্টা করা হয়েছিল। সেটি না পেরে হয়ত বা তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওইদিন রাতে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কোন কিছু করা যাবেনা বলে থানা থেকে তাকে জানানো হয়।
মেয়ের মার পরিবার থেকে যে অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে তা তার পচ্ছন্দ হয়নি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান বাবা টনি মল্লিক।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে নিজের জীবনকে ভালবাসত। জীবনের ঘটনা প্রবাহ সে একটি ডায়েরীতে লিখে রাখত। ঘটনার দিন তার ব্যক্তিগত ডায়েরী বা তার ব্যবহৃত মোবইল ফোন পাওয়া যায়নি। সৎ বাবা রিজভী মেয়ের ব্যবহৃত ডায়েরী ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। মেয়ের মোবাইল ফোন চাইলে সে নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থান করছে বলে জানায়। মোবাইল ফোন দেওয়ার কথা বললে রিজভী স্বশরীরে না এসে বন্ধুর মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু ডায়েরীর ব্যাপারে কোন কথা বলতে পারেনি রিজভী।
অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস আই) সুকান্ত দাশ বলেন, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কি কারণে করেছে তা তিনি বলতে পারেননি। তবে রহস্য উদঘটনের চেষ্টায় আছি। টনির অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, মেয়ের শরীরে কোন আঘাত বা আঁচড়ের চিহ্ন ছিলনা। সুরাতহাল রিপোর্ট করার সময় তা দেখা হয়েছে।
সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক বলেন, মেয়ের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। যেহেতু মেয়ের মা বেলা প্রতিবেশী রিজভীকে বিয়ে করেছে। মূলত তাকে ফাঁসানোর জন্য এ কথাগুলো বলেছেন।
ওসি আরো বলেন, মেয়ের বাবা ঘরের দরজা ভেঙ্গে মেয়ের মরদেহ বের করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। যদি হত্যা করা হবে তাহলে ঘরের দরজা দিল কে?
খুলনা গেজেট/এসজেড