আটলান্টিক মহাসাগরের নিচে পাঁচ আরোহী নিয়ে গত মাসে বিস্ফোরিত হয় ডুবোযান টাইটান। তারা সবাই সাগরের তলদেশে পড়ে থাকা টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবেশ দেখতে ওই ডুবোযানটিতে চড়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সমুদ্রের পানিতেই সলিল সমাধি হয় তাদের।
ভয়াবহ বিস্ফোরণের শিকার ডুবোযান টাইটানের যাত্রীরা মৃত্যুর অন্তত ৪৮ সেকেন্ড আগে তাদের পরিণতি সম্পর্কে বুঝে যান বলে জানিয়েছেন স্প্যানিশ প্রকৌশলী ও সমুদ্র বিশেষজ্ঞ হোসে লুইস মার্টিন। তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনআইইউসের সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেছেন।
ওই বিশেষজ্ঞ তার বিশ্লেষণে বলেছেন, যখন পানির নিচে ডুবোযানটি নিমজ্জিত হয় তখন একটি বৈদ্যুতিক গোলযোগ দেখা দেয়। এতে যানটি স্থিতিশীলতা হারিয়ে ফেলে। এর ফলে এটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে পানির নিচের দিকে তলিয়ে যেতে থাকে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, পাঁচ আরোহী বিস্ফোরণ সম্পর্কে ৪৮ থেকে ৭১ সেকেন্ড আগে বুঝতে পারেন। বিষয়টিকে একটি ভয়ংকর ছবির সঙ্গে তুলনা করে তিনি আরও জানিয়েছেন, টাইটানের পাইলট যানটিকে পানিয়ে ভাসিয়ে তুলতে যে ‘ভার অপসারণ’ ব্যবস্থা আছে; সেটি সক্রিয় করতে পারেননি। কারণ ওই ধরনের জরুরি পরিস্থিতিতে এটি কাজ করার মতো শক্তিশালী ছিল না।
এই বিশেষজ্ঞ আরও জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার আগে টাইটানের অবস্থান পরিবর্তন হয়ে যায় এবং তীরের মতো খাড়াভাবে পানিতে নিচে যেতে থাকে এটি। তিনি বলেছেন, ‘সবাই হুড়োহুড়ি শুরু করেন এবং একে-অপরের ওপর পড়ে যান। কি ভয়ানক ভাবুন, ভয়, কষ্ট। এটি একটি ভয়ানক ছবির মতো ছিল। সবকিছু ৪৮ থেকে ৭১ সেকেন্ডের মধ্যে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘ওই সময় তারা সব বুঝতে পারছিলেন। আর এমন সময় তারা কেমন অনুভব করছিলেন সেটি সম্পর্কে জানা কঠিন।’
তিনি আরও বলেছেন, সাগরের এমন গভীরে যে চাপ থাকে; এতে করে টাইটানে যদি একটি সামান্য ছিদ্রও হয়ে থাকে, তাতে ৬৩০ মাইল গতিতে ওই সময় এটির ভেতর পানি ঢুকেছিল। আর পানির এমন চাপের কারণে যানটির ভেতরে থাকা সবার তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়।
এদিকে বিস্ফোরিত হওয়া ডুবোযানটিতে করে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েছিলেন এটির পরিচালনকারী সংস্থা ওশেনগেটের সিইও স্টকটন রাসম, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ধনকুবের শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ, আরেক ব্রিটিশ ধনকুবের হামিস হার্ডিং এবং ডাইভিং বিশেষজ্ঞ পল-হেনরি নারগোলেট। সূত্র: এনআইইউস।
খুলনা গেজেট/এনএম