ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আমি কলকাতায় ছিলাম। ২ জুলাই আমি গোবরডাঙ্গা, মছলন্দপুর, স্বরূপনগর, বারাসাত, মধ্যমনগর প্রভৃতি এলাকায় ঘুরি। মানুষের সাথে কথা বলি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, অটো-চালক, বাস শ্রমিক, দিনমজুর, শিক্ষক, চাকুরে প্রভৃতির সাথে আলাপচারিতায় একটি বিষয় পরিস্কার হয় যে, ‘তৃনমূল’ ই জয়লাভ করবে। তবে জয়লাভটি সহজ হবে না। সহজ হবে না বলতে, তৃণমূলের পেটোয়া বাহিনী আগের মত বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমাদান ঠেকাতে পারেনি। তারপরও ১২ শতাংশ আসনে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে।
একজন ক্ষুদে দোকানী বলেছিলেন যে, তৃণমূলই জিতবে, তবে জেতাটা সহজ হবে না; মনোনয়নপত্র জমাদান যেমন তারা আটকাতে পারেনি, তেমনি ভোট দেওয়াও তারা আটকাতে পারবে না। তৃণমূলের বাহিনীর দাপট রুখে দেয়ার চেষ্টা থাকবে। এই যে রুখে দেওযার চেষ্টা, তার প্রতিফলন ঘটেছে নির্বাচনে মানুষের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। সাধারণ মানুষের বামফ্রন্টের প্রতি সমর্থন বেড়েছে, তবে তারাও ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে যে পেটোয়া বাহিনী নির্ভর হয়েছিল, তা মানুষের মনে আছে। বামফ্রন্টের পাল্টা পেটোয়া বাহিনী তৈরি করে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন হয়, তাতে সহযোগিতা করেছিল ভারতীয় শক্তিশালী পুঁজিতন্ত্র -ধনী লুটপাটগোষ্ঠী।
বামফ্রন্ট ঠিক এই কারণেই পাল্টা পেটোয়া বাহিনী গড়ে তুলতে পারছে না। আবার পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু (শতাংশের হিসেবে যা প্রায় অর্ধেক) মুসলিম জনগোষ্ঠী যারা বামফ্রন্টের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে তৃণমূলে আস্থা রেখেছিল, তাদের একাংশ তৃণমূলের উপর ক্ষুব্ধ হলেও বামফ্রন্টের উপর আস্থা তৈরি করতে পারছে না। এর অন্যতম একটি বড় কারণ, পেটোয়া বাহিনীর আক্রমণ রুখতে না পারা। এ কারণে মুসলিমদের মধ্যে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি করার উদ্যোগ বেড়েছে। যার প্রতিফলন হিসেবে দেখা গেছে যে, নওশাদের নেতৃত্বাধীন দলটি তৃণমূলের কাছ থেকে পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নিতে পেরেছে। সামগ্রিকভাবে বিজেপি, কংগ্রেস, বামফ্রন্টসহ তৃণমূল-বিরোধীরা একত্রিত হয়ে শাসক দলের পেটোয়া বাহিনীকে রুখতে চেয়েছে। এখানে বিজেপিকে তারা ক্ষমতার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। যা তৃণমূলের ভাষায় রাম-বাম জোট।
প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বিজেপিকে রাজ্যের ক্ষমতায দেখতে চায় না। এই বিবেচনায় রাজ্যবাসী এক গ্যড়াকলে পড়েছে – তা হচ্ছে, বিজেপিকে চাই না; বামফ্রন্ট, কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার সামর্থ্য নেই; অগত্যা তৃণমূলকে মেনে নেয়া। অবশ্য, তৃণমূল-প্রধানের উদ্ধৃতি দিয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ৫ জুলাইয়ের একাধিক পত্রিকায় লেখা হয়, তিনি বলেছেন, তৃণমূল-ই জিতবে; স্বতন্ত্র কিছুও জিতবে, তবে তারা তৃণমূলে যোগ দেবে। স্বতন্ত্র ও অন্য দলের বিজয়ী নেতাদের ভিড়িয়ে যে পরিষদ গড়া হয়, তার উদাহরণও ভুরি ভুরি।
একজন শিক্ষক জানালেন, গত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েত-এর এক দরিদ্র নারী সদস্যকে ২২ লাখ টাকা (রুপি) দেয়া হযেছিল। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগণের ঘাড় চেপে সমর্থন আদায় করা। গণতন্ত্রের অপূর্ব নমুনা! আব্রাহাম লিঙ্কন দেখতেতো পারছেন না, দেখতে পেলে নিশ্চয়ই তিনি লজ্জায় জিভ কাটতেন!! (ফেসবুক ওয়াল থেকে)।
খুলনা গেজেট/এনএম