প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমি হচ্ছি সেই দলের লোক যারা মনে করে বাংলাদেশ ক্রিকেটের মূল জঞ্জাল ক্রিকেট বোর্ড ও ম্যানেজমেন্ট। খেলোয়াড়রা যেটুকু সমস্যা সেটা সমাধান সহজ। টীম থেকে বাদ দেয়া, সাময়িকভাবে দূরে রাখা, বিশ্রামে দেয়া, এ টীমে খেলানো নানাভাবে প্লেয়ারদের ডিস্টিলড করা যায়।
কিন্তু জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা পাপন, নান্নু, সুজল, জালাল সহ আরও কিছু বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এই যে দলিলমূলে সম্পত্তি বানিয়ে ফেললো এর সমাধান জরুরী। ক্রিকেটে এই সামন্তপ্রথা থেকে বোর্ড/ম্যানেজমেন্টকে বের করে নিয়ে আসতে না পারলে সমস্যা থেকেই যাবে এবং তা দিনদিন প্রকট হবে।
এবার একটু তামিম প্রসঙ্গ ….. তামিম আমার ব্যক্তিগত পছন্দের একজন প্লেয়ার, বিশেষ করে সে ওয়ার্ল্ডক্লাস ব্যাটসম্যানদের একজন কোন সন্দেহ নেই। তবে তার এটিচ্যুডে সমস্যা আছে। যেমন আপনি মুশফিককে দেখবেন খেলার বাইরেও কী পরিমাণ পরিশ্রম করে, সাকিব খেলার বাইরে থাকলেও মাঠের বাইরে থাকে না, অবসরে জিম সহ মাঠে তাকে ঘাম ঝরাতে দেখা যায়, কিংবা তাসকিনের পাল্টে যাওয়া কত পরিশ্রমের ফল তা সবারই জানা। এই জায়গাটায় তামিমের ঘাটতি, ফিটনেসের ব্যাপারে তার তৎপরতা কম বলেই দৃশ্যমান। ক্যারিয়ারে ইঞ্জুরিও তাকে বেশ ভুগিয়েছে ! অন্যদের শারিরীক কাঠামো আর তামিমের শরীরে সুষ্পষ্ট পার্থক্য, এ জামানায় কেন প্লেয়ারের শরীরে মেদ চলবে না…।
এই পরিস্থিতিতে তামিমের কৌশল পাল্টানো এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে অন্যপথে হাঁটা আবশ্যক ছিল। আমি বহুদিন আগেই একটা স্টাটাসে লিখেছিলাম ওপেনিংয়ে আর নয়, এখন সময় পরের দিকে ব্যাট করা। শচীন লারা এদের মত গ্রেটরা ক্যারিয়ারের শুরুতে ওপেন করলেও পরে পরিণত সময়ে তারা কিন্তু ব্যাটিং পজিশন চেঞ্জ করেছে।
তামিম সে পথে হাঁটলে ভাল করতো। তারপর অধিনায়কত্ব তো অনেক গ্রেট প্লেয়াররা করেননি অথবা ব্যাটিং বা বোলিংয়ে মনোযোগী হতে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। যেখানে পারসোনাল পারফরমেন্সই টলে যাওয়ার ঝুঁকি প্রবল সেখানে অধিনায়কত্বের বাড়তি চাপ কেন?
তবে হ্যাঁ, তামিমের মত প্লেয়ারকে শায়েস্তা বা হেনস্থা করে সাইজ করার প্রবণতা কোনকারণেই গ্রহণযোগ্য নয়। কাউন্সিলিংই একমাত্র পথ ….। এমন তো নয় যে তামিম পৃথিবীর কারো কথা শুনবে না।
বাংলাদেশে আশরাফুল বিশ্ব ক্রিকেটে প্রথম নজরকাড়া প্লেয়ার তারপর মাশরাফি সাকিব মুশফিক তামিম মাহমুদুল্লাহ এরাই আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাইওনিয়র একথা অনস্বীকার্য !
একজন লিজেন্ড মাঠ থেকে সতীর্থদের উঁচু করা ব্যাটের নিচ দিয়ে আনন্দাশ্রুতে আপ্লুত হয়ে খেলা থেকে বিদায় নিচ্ছে এমনকী প্রতিপক্ষ প্লেয়াররাও সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সম্ভাষণ জানাচ্ছে, দর্শক সব উঠে করতালি দিচ্ছে এমন সুখকর পরিণতি থেকে কাউকে বঞ্চিত করা কেন ?
অভিশপ্ত মানুষগুলিই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য মূল সংকট। ক্রিকেট বোর্ড, ম্যানেজমেন্ট এগুলির খোলনলচে পাল্টে নুতন কিছুতে সমাধানের উপায় খুঁজতে হবে। পাপন গংরা যতদিন পশ্চাদদেশে সুপার গ্লু লাগিয়ে চেয়ারে বসে আছে ততদিনে বিশ্বের নানাদেশে কতবার যে বোর্ডে ম্যানেজমেন্টে নির্বাচক প্যানেলে পরিবর্তন হয়েছে সেকথা আর নাইবা বললাম। এদের যত দ্রুত রিটারমেন্টে পাঠাবেন ততই মঙ্গল। আমরা আমাদের স্বপ্নের সারথী লিজেন্ড প্লেয়ারদের চোখে বেদনায় মুচড়ে যাওয়া অশ্রু দেখতে চাই না, তাদের আবেগাপ্লুত আনন্দাশ্রুই আমাদের কাম্য।
পুনশ্চ : অন্তত: বিশ্বকাপের জন্য তামিম তুমি তোমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন কর। বরফ গলাতে সংশ্লিষ্ট অথবা সংশ্লেষের বাইরের প্রভাবশালী কারোর উদ্যোগ প্রয়োজনে সেটাও কাম্য। (ফেসবুক ওয়াল থেকে)
খুলনা গেজেট/এসজেড