টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন অনেক দিন হলো। খেলছেন টেস্ট ও ওয়ানডে। এর মধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেটের নেতৃত্বের ভার তার কাঁধে। কিন্তু কে জানতো সেসব কিছু কে পেছনে ফেলে অবসরের ঘোষণা দিবেন তামিম ইকবাল।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুরে নিজ শহর চট্টগ্রামে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা দেন তামিম। ওয়ানডে অধিনায়কের অবসর ঘোষণায় দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা যেন মানতেই পারছেন না। হুট করে এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলেন তামিম?
যদিও একটি সূত্রে জানা গেছে, তামিমের অবসরের পেছনে মূল কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও টিম ম্যানেজমেন্ট। দুমুখী চাপে পড়েই এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
যদিও বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, বিসিবি পক্ষ থেকে তাকে এখনই অবসর না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলে বিশ্রাম নিয়ে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে তামিম তার সিদ্ধান্তেই ছিলেন অটল।
জালাল ইউনুস বলেন, ‘সকালে আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে অবসর না নেয়ার অনুরোধ করেছি। বলেছি, তুমি এই সিদ্ধান্ত নিও না। দরকার হলে পরে চিন্তা করো। এই সিরিজটা খেলে বিশ্রামে যাও। ব্যথাটা (কোমরের ইনজুরি) ঠিক করো। এরপর বিশ্বকাপের জন্য রেডি হও।’
২০০৭ সাল থেকে জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ তামিম। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে নির্ভরতার প্রতীক। দলের অন্যতম সেরা ওপেনার তামিম। দেশের হয়ে তার ব্যাটেই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান এসেছে।
তবে বেশ কিছুদিন ধরে চোট ও ফিটনেস নিয়ে ভালোই ভুগতে হচ্ছিল বাঁহাতি এই ওপেনারকে। বিভিন্ন সিরিজের আগে ছিটকে যাওয়া কিংবা পারফরম্যান্স তলানিতে পৌঁছানো মিলিয়ে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না তামিমের।
সম্পন্ন ফিট না থাকার পরও আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও বিসিবি সভাপতির অসন্তোষের কারণও হন তামিম। এসব নিতে না পেরেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশ সেরা এই ওপেনার।
তামিমের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন ধরেই বোর্ড ও টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না তার। বোর্ডের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে মানসিকভাবে চাপে পড়েন তামিম। সেসব নিতে না পেরেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
যদিও তামিম সে রকম কোনো কিছু তার সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করেননি। তবে তার কান্নাভেজা চোখে স্পষ্ট সিদ্ধান্তটা এতটাও সহজ ছিল না। তবে তামিম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আবসরের ঘোষণা পেছনে হুট করে সিদ্ধান্ত ছিল না। এটার আলাদা আলাদা কারণ রয়েছে।’
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে তামিম বলেন, ‘আগামীকালের (বুধবার) ম্যাচে আমি খেলবো। শরীর আগের চেয়ে ভালো। এটা বলব না যে আমি শতভাগ ফিট। কাল খেলার পর আরও ভালো বুঝতে পারব যে কী অবস্থা। তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত, আমি কাল খেলছি, ইনশাআল্লাহ।’
ম্যাচের আগের দিন দলের অধিনায়কের এমন মন্তব্যে বেশ চটেন বোর্ড সভাপতি। একটি গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘এটি তো আর পাড়া-মহল্লার কোনো ম্যাচ নয়, আন্তর্জাতিক একটা ম্যাচ। এমন সিরিজের আগের দিন অধিনায়ক বলছে সে ফিট না। কিন্তু খেলবে। খেলে নিজের ফিটনেস বোঝার চেষ্টা করবে। এটা তো পেশাদার কোনো আচরণ হতে পারে না।’
হেড কোচ হাথুরুসিংহে বরাবরের মতোই তার কড়া শাসনের জন্য পরিচিত। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে দল থেকে ছেঁটে ফেলেন তিনি। লঙ্কান এই কোচের অধীনে সিনিয়র ক্রিকেটারদের একটা অন্যরকম চাপ থাকে তা অতীত বলে দেয়। দলে পারফরম্যান্স থেকে ধরে ফিটনেস ইস্যু সব কিছুতেই কড়া নজর থাকে হাথুরুর। ক্রিকেট পাড়ায় তাই জোর গুঞ্জন হাথুরুসিংহের চাপে পড়েই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন দেশসেরা ওপেনার।
নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের জন্য তামিম সতীর্থ, কোচ, বিসিবি, পরিবার ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় আমার সব সতীর্থ, সব কোচ, বিসিবির কর্মকর্তারা, আমার পরিবার ও যারা আমার পাশে ছিলেন, নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার অবদান ও ভালোবাসায় আমি চেষ্টা করেছি সব সময় দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে।’
তামিম অবসর পরবর্তী জীবনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জীবনের নতুন অধ্যায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সবাইকে আবারও ধন্যবাদ।’
অধিনায়ক হিসেবে তামিমের সাফল্য চোখে পড়ার মতোই। ৩৭ ম্যাচের ২১টিতে জিতেছেন তিনি। ১৪ ম্যাচে হার ও দুই ম্যাচ পরিত্যক্ত মিলিয়ে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে এটি তার সাফল্য হিসেবে দেখা হবে।
খুলনা গেজেট/এসজেড