বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটি ভেসে গেলেই হয়তো কিছুটা মুখ রক্ষা হতো বাংলাদেশের। এর আগেই যে আফগানিস্তানের বোলিং তোপে ওপেনিং থেকে শুরু করে টাইগারদের পুরো টপ-অর্ডার ধসে গেছে। ৩০-এর কোঠা পার করতে না পারা বাকি ব্যাটারদের পাশে একমাত্র উজ্জ্বল নাম তাওহীদ হৃদয়। তার হার না মানা ফিফটিতে আগেই তছনছ হওয়া বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছে ১৬৯ রান।
এর আগে বৃষ্টির কারণে ম্যাচের গণ্ডি কমিয়ে আনা হয় ৪৩ ওভারে। অবশ্য সেটি বাংলাদেশের ভাবনায় প্রভাব ফেলার মতো কিছু নয়। কারণ তার আগেই হৃদয় বাদে বিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশের সব স্বীকৃত ব্যাটাররা। ৩৪.১ ওভারে দ্বিতীয় দফায় বৃষ্টি শুরুর সময় টাইগারদের রান ছিল ৭ উইকেটে ১৪৪। এরপর ৫৩ বলে তাদের সংগ্রহ যা হবে সেটি হতো স্বাগতিকদের জন্য সান্ত্বনার।
চট্টগ্রামের শহীদ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মেঘ মাথায় নিয়ে এদিন খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদী। কোমরের চোট থাকায় তামিমের খেলা নিয়ে কিছুটা দোলাচল থাকলেও তিনিই টাইগারদের প্রতিনিধি হয়ে নেমেছেন। এরপর ম্যাচের শুরুটা দেখেশুনে শুরু করেন দুই ওপেনার তামিম ও লিটন দাস।
ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন তামিম। বেশিক্ষণ থিতুও হতে পারলেন না উইকেটে। ফজলহক ফারুকির অফস্ট্যাম্পের বলে আলতো করে ব্যাট চালিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনলেন। উইকেটরক্ষক রহমানউল্লাহ গুরবাজের তালুবন্দী হয়ে ফিরেছেন ২১ বলে মাত্র ১৩ রান করে। এরপর থিতু হয়েও ফিরেছেন লিটনও। ইনিংসের ১২তম ওভারে তিনি আফগান স্পিনার মুজিব-উর রহমানের করা বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন। মুজিবের খাটো লেংথের বলটি তুলে মারতে গিয়ে তিনি ফিরেছেন ৩৫ বলে ২৬ রান করে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে বড় ভরসার নাম নাজমুল হোসেন শান্ত। আজও তিনি শুরুটা করেছিলেন ইতিবাচক। তবে ইনিংস বড় করা হয়নি। মোহাম্মদ নবির প্রথম বলেই তিনি সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন। তিনি ফিরেছেন মাত্র ১২ রানে। পরপর ২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ বেশ চাপে পড়ে যায়। এরপরই চোখ রাঙিয়ে চট্টগ্রামের সাগরিকায় নামে মুষলধারে বৃষ্টি। যার কারণে আধাঘণ্টারও বেশি সময় খেলা বন্ধ ছিল।
বৃষ্টি শেষে টাইগারদের পথ দেখাতে থাকা সাকিব আল হাসানও চাপে ভেঙে পড়েন। রানের গতি বাড়াতে গিয়েই আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে অফ-সাইডে শট খেলতে গিয়ে মোহাম্মদ নবির তালুবন্দী হন তিনি। এতে হৃদয়ের সঙ্গে জুটি বড় করার স্বপ্নে দারুণ ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। সাকিব ৩৪ বলে ১৪ রান করেছেন। তার পরপরই আউট হয়ে যান মিস্টার ডিফেন্ডেবলখ্যাত মুশফিকুর রহিম। রশিদ খানের ভয়ঙ্কর এক গুগলিতে তিনি ৩ বলে ১ রান করেই বোল্ড হয়ে ফিরে যান।
এরপর একে একে ফিরেছেন আফিফ হোসেন এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। মাঝে মূল স্কোয়াডের বাইরে থাকা আফিফ এই সিরিজ দিয়ে ফের দলে ফিরেছিলেন। কিন্তু তিনিও তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গ দিতে পারেননি। রশিদের লেগ স্পিন ব্যাকফুটে ভর করে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন আফিফ, তবে মিস করে যান। প্রথমে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও আফগানিস্তানের রিভিউ কাজে লেগে যায়। মাত্র ৪ রানে ফেরেন আফিফ। ২৩ বলের সংগ্রাম শেষে ৫ রানে মিরাজ ফারুকির বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছেন।
এরপর আরও এক দফা বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ থাকে। সে সময় পর্যন্ত একপ্রান্ত তরুণ তাওহীদ হৃদয় আগলে রাখলেও, অন্যপ্রান্তে তিনি সতীর্থদের আসা-যাওয়া দেখেছেন। দলের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার। তার ব্যাটে চড়েই মূলত দেড়শ’র কোঠা পেরিয়েছে টাইগাররা।
আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়েছেন পেসার ফজলহক ফারুকী। এছাড়া স্পিন অলরাউন্ডার রশিদ খান ও মুজিব-উর রহমান দুটি করে উইকেট পেয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এসজেড