খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

ঝিনাইদহে ২৩ বছর পর ঘরে ফিরল ফজিলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহের মহারাজপুর ইউনিয়নের বিষয়খালীর খন্দকার পাড়ায় ২০০০ সালে নিখোঁজ হয়েছিলেন ফজিলা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পরিবারের সবাই মনে করেন হয়ত মারাই গেছে ৩ সন্তানের জননী ফজিলা খাতুন। মেয়েরা মাকে ফিরে পাওয়ার আশা যখন একেবারেই ছেড়ে দেন। ঠিক তখনই জানতে পারেন তাদের মা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থান করছেন। এরপর দীর্ঘ ৩/৪ মাস বাংলাদেশ-ভারত হাইকমিশনের চিঠি চালাচালিতে দেশে ফেরেন ফজিলা খাতুন।

মানসিক ভারসাম্যহীন ফজিলা ২০০০ সালে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। স্বামী ও এক মেয়ের মৃত্যুর পর তিনি মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন। ফজিলার ৩ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়ে ফিরোজা আক্তার ও পিঞ্জিরা আক্তার এখনও বেঁচে আছেন। মাকে ফিরে পেতে পুলিশসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সবার কাছেই ছুটে বেরিয়েছিল দুই কিশোরী মেয়ে। কিন্তু কোনো চেষ্টাতেই সন্ধান মেলেনি মায়ের। একপর্যায়ে মাকে ফিরে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল দুই মেয়ে।

এরপর গত ৩/৪ মাস আগে তারা স্থানীয় চেয়ারম্যানের মারফত খবর পান তাদের মা বেঁচে আছেন। তবে তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শুরু হয় দেশে ফিরিয়ে আনার তোড়জোড়। ত্রিপুরা রাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ এ ব্যাপারে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। শুক্রবার (২৩ জুন) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসেন মা ফজিলা খাতুন। মাকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হন পুরো পরিবার। এত দিন যাকে মৃত ভেবেছেন তাকে সশরীরে কাছে পেয়ে পুরো পরিবারে বইছে আনন্দের জোয়ার।

বড় মেয়ে ফিরোজা আক্তার বলেন, আমাদের বয়স যখন দুই কিংবা তিন, তখন আমাদের বাবা মারা যান। দারিদ্রতার কষাঘাতে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া মা আমাদের এতিমখানায় রেখে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। আমরা তখন কিশোরী। এতিমখানায় থাকতে খবর পাই মা হারিয়ে গিয়েছেন।অনেক খোঁজাখুঁজির পর মাকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।

ফজিলা খাতুনের মা মোমেনা খাতুন বলেন, আমার এই জীবনে যে আবার মেয়েকে পাব তা ভাবতেই পারিনি। বাবা খয়বার আলী বলেন, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আমার ৫ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে হচ্ছে ফজিলা খাতুন।

পিঞ্জিরা আক্তার বলেন, আমি আর আমার জামাই হালিম শেখ মাকে আনতে যাই। বাংলাদেশের ঝিনাইদহ থেকে নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দুই যুগ পর আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেন মা।

তিনি জানান, শুক্রবার (২৩ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহায়তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খুরশীদ আলম বলেন, দরিদ্র এ পরিবার একসময় হাল ছেড়ে দিয়েছিল। দুই মেয়ে প্রায়ই আসতো ইউনিয়ন পরিষদে। একসময় মনে হয় ওদের মায়ের সঙ্গে মেয়েদের আর দেখা হবে না। এ মিলনে আমরা সঙ্গে থাকতে পারায় সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!