খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগনেতা গাজী জাকির হোসেন হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম অচিরেই শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ হত্যার জড়িত ১০ জনকে অভিযুক্ত করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ‘চ” অঞ্চলে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তবে চার্জশিটে হত্যার পরিকল্পনাকারী অর্থযোগানদাতারা চিহ্নিত না হওয়ায় সন্তুষ্ট নন ভুক্তভোগীর পরিবার। তার এ বিষয়ে আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করতে পারেন। ২০২২ সালের জুন মাসে দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার দুই মাস পর মারা যান।
হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশফাক পারভেজ খুলনা গেজেটকে বলেন, সোমবার (১৯ জুন) চার্জশিটের বিরুদ্ধে বাদীর নারাজি আবেদনের দিন ধার্য ছিলো। কিন্তু বাদী নিহত গাজী জাকির হোসেনের জৈষ্ঠ্য পুত্র গাজী আরাফাত হোসেন কাইফ একটি মামলায় জেলে থাকায় আগামী ১৩ জুলাই পরবর্তী চার্জশিট পর্যালোচনার দিন ধার্য হয়।
মামলার অন্যতম আসামী শেখ আনছার আলী দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হওয়ায় মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটে অভিযুক্ত অপর আসামীরা সবাই জামিনে রয়েছেন। চার্জশিটভুক্ত আসামীরা হলেন ১. সোহেল শেখ (৩৫) পিতা মৃত খোরশেদ শেখ ২. শামীম শেখ (২৮) পিতা মোঃ আনছার শেখ, ৩. মোঃ আলমগীর মোল্যা (৩৪) পিতা ওলিয়ার মোল্লা ৪. কামাল মল্লিক (২৬) পিতা মোফাজ্জেল মল্লিক ৫. রসুল শেখ (৩০) পিতা শাহজাহান শেখ ৬. সালাম শেখ (৪৮) পিতা মৃত মালেক শেখ ৭. মোঃ আসলাম বিশ্বাস (৪০) পিতা মৃত গোলাম বিশ্বাস ৮. মিকাইল শেখ (৩৫) পিতা মোঃ কুদ্দুস শেখ ৯. মোঃ বেল্লাল শেখ (৪৯), পিতা আবু শেখ, মিঠুন বর (৩৩) পিতা তপন বর চার্জশিটে অভিযুক্ত ১০ জন আসামীর মধ্যে ১ম ৯ জনের বাড়ি লাখোয়াটী গ্রামে। বাকি একজনের বাড়ির নন্দপ্রতাপ গ্রামে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিঘলিয়া থানার এসআই রানা প্রতাপ ঘোষ চার্জশিটে অভিযুক্তদের সাথে মামলার ভিকটিম নিহত গাজী জাকির হোসেন খুনের পিছনে দীর্ঘদিনের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিরোধকে ইঙ্গিত করেন। চার্জশিটে তিনি উল্লেখ করেন, ইতিপূর্বে ভিকটিম মৃত গাজী জাকির হোসেনকে হত্যার জন্য চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামিরা তার উপর আক্রমণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ১২ জুন গাজী জাকির হোসেন আজিবর শেখকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে বোয়ালিয়া চর মাছের ঘের দেখতে যায়। সন্ধ্যা আনুমানিক সাতটা ২০ মিনিটের সময় নিহত গাজী জাকির হোসেন তার সঙ্গে থাকা আজিবরকে মোটরসাইকেলের পিছনের নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বোয়ালিয়া চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পাকা রাস্তার উপর পৌঁছান। সেখানে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে ওৎ পেতে থাকা আসামি সোহেল, শামীম, আলমগীর মোল্লা, কামাল মল্লিক তার মোটরসাইকেলের সামনে এসে মোটরসাইকেল আড় করে দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে আশেপাশে থাকা আনছার শেখ, রাসুল, সালাম, আসলাম বিশ্বাস, মিকাইল, বেল্লাল, মিঠু এরা সবাই মিলে গাজী জাকির হোসেন ও আজিবরকে হাতুরী, লোহাট রড, রামদা, জিআই পাইপ,, হকিস্টিক সহ বাঁশের লাঠি দিয়ে পথরোধ করে ঘিরে ধরে। সময় আসামিরা সবাই মিলে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে গুরুতর জখম করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে গুরুতর অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে প্রথমে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ২ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
নিহত গাজী জাকির হোসেনের স্ত্রী কাকলি বেগম খুলনা গেজেটকে বলেন, অনেকদিন পর আমার স্বামীর হত্যা মামলার চার্জশিট বের হয়েছে। আমি চাই আমার স্বামীর হত্যার বিচার হোক।
চার্জশিটভুক্ত আসামি আঃ সালাম শেখ চার্জশিটের প্রতিক্রিয়ায় খুলনায় গেজেটকে বলেন, গাজী জাকির হত্যা মামলার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না। ঘটনার সময় আমি ফুলতলা উপজেলার দামোদার গ্রামে ছিলাম। আমাকে অন্যায়ভাবে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে।
চার্জশিটভুক্ত ৭ নং আসামী আসলাম বিশ্বাস বলেন, জাকির গাজীর ওপর যে দিন সন্ধ্যায় হামলা হয় ওইদিন রাত ৮ টায় আমি জেলখানা থেকে বের হই। হামলার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না ।
খুলনা গেজেট/কেডি