মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে ছয় কংগ্রেসম্যানের পাঠানো চিঠির ব্যাপারে অবগত নয় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। তবে তারা উল্লেখ করেছে, সাধারণত এসব চিঠির উত্তর গোপনীয়ভাবে দেওয়া হয়।
ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে―ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের এমন বক্তব্যকে অসত্য ও মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেছেন ১৯২ জন বাংলাদেশি-আমেরিকান।
বুধবার (১৪জুন) নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ‘আমি চিঠির বিষয়টি অবগত নই। আমরা সাধারণত কংগ্রেসের সদস্যদের কাছ থেকে যে চিঠিগুলো পাই সে বিষয়ে মন্তব্য করি না।’
তিনি জানান, তারা সাধারণত গোপনীয়ভাবে তাদের উত্তর দেয়, তবে তারা ব্যক্তিগতভাবে ও প্রকাশ্যে তাদের যে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারেন।
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মুখপাত্র মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সারাবিশ্বে গণতন্ত্রের প্রচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে তিনি বিশেষভাবে এ বিষয়ে কথা বলতে চান না।
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে অবশ্যই বাংলাদেশ রয়েছে। শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার অগ্রগতির জন্য গণতন্ত্র হলো সবচেয়ে স্থায়ী উপায়। মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রচার করা আমাদের প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে আমরা পরিষ্কার করেছি।’
এদিকে প্রায় ২০০ সদস্যের বাংলাদেশি আমেরিকানদের একটি জোট বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের সাম্প্রতিক চিঠিতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞার দাবি করা হয়েছে, তাতে ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য’ রয়েছে।
বাংলাদেশি আমেরিকানরা বলেছেন, ওই চিঠিতে ২০০১ সালের অক্টোবরের জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোট দ্বারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর করা সহিংসতাকে উপেক্ষা করে হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে―ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের এমন বক্তব্যকে অসত্য ও মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেছেন ১৯২ জন বাংলাদেশি-আমেরিকান। গতকাল বুধবার (১৪ জুন) এক যৌথ বিবৃতিতে তারা মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের ওই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কংগ্রেসম্যান বব গুড, স্কট পেরি, ব্যারি মুর, টিম বার্চেট, ওয়ারেন ডেভিডসন ও কিথ সেল্ফ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা চিঠিতে দাবি করেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে হিন্দু জনসংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। তারা আরো দাবি করেন, শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু খ্রিস্টান জনসংখ্যার উপাসনালয় পুড়িয়ে দিয়ে, লুটপাট করে, যাজকদের জেলে বন্দি করে, ধর্মান্তরিত করে এবং পরিবার ভেঙে দিয়ে নিপীড়ন করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভার ওই ছয় সদস্য বাংলাদেশ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণকে সম্ভাব্য সর্বোত্তম সুযোগ দেওয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
১৯২ জন বাংলাদেশি-আমেরিকান ভুল ও মিথ্যা তথ্যে ভরা ওই চিঠি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি তারা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছেন।
যৌথ বিবৃতিত বাংলাদেশি-আমেরিকানরা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে দেওয়া মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে থাকা এই ‘ভুল তথ্য’ কেবল বাংলাদেশের সংখ্যালঘু অধিকারের বিষয়ে কংগ্রেসম্যানদের অবস্থানের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই ক্ষুণ্ন করবে না, উপরন্তু নিম্নস্বাক্ষরকারী বাংলাদেশি-আমেরিকানদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সবচেয়ে খারাপ দিকটি হচ্ছে, (মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের) এসব মিথ্যা তথ্যসংবলিত বক্তব্য বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের দুর্দশা বাড়িয়ে তুলবে।
এর আগে বাংলাদেশি হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং তাদের নেতারা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বাইডেনের কাছে কংগ্রেসম্যানের এই চিঠিকে ‘মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
এদিকে বাংলাদেশি-আমেরিকানরা উল্লেখ করেছেন, কংগ্রেসম্যানরা ২০০১ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার তথ্যকে এড়িয়ে গেছেন। ওই নির্বাচনে বিজয়ী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংস নির্যাতন সংঘটিত হয়েছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তারা বলেছেন, কংগ্রেসম্যানরা বর্তমান সরকারের অধীনে বাংলাদেশে খ্রিস্টান জনসংখ্যার নিপীড়ন সম্পর্কে বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন।
বাংলাদেশি-আমেরিকানরা বলেন, আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য দায়ী একই গোষ্ঠীগুলোই বিদেশি ও ব্লগার-অ্যাক্টিভিস্টদের হত্যা এবং দেশজুড়ে বোমা হামলা চালানোর জন্যও দায়ী।
কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু অধিকারের জন্য সক্রিয়ভাবে লড়াই চালিয়ে যাওয়া এই প্রবাসীরা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সুস্থতার জন্য কংগ্রেসম্যানদের চিঠি থেকে ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য’ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন মিলবোর্ন সিটির মেয়র মাহবুবুল আলম তৈয়ব, কাউন্সিলম্যান ড. নূরন নবী (এমজে), নূরুল হাসান (এনএইচ), রাজ্য প্রতিনিধি আবুল খান (এনএইচ), অধ্যাপক এ বি এম নাসির (এনসি), ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ (পিএ), নবেন্দু দত্ত (এনওয়াই), বিজ্ঞানী ড. সুফিয়ান এ খন্দকার, ড. জিনা নবী (এনজে), আন্তর্জাতিক টেকসই উন্নয়নের পরিচালক ইকবাল ইউসুফ, হিউজ নেটওয়ার্কের সিইও নিজামউদ্দিন আহমেদ (ভিএ), প্রকৌশলী রানা হাসান মাহমুদ (সিএ), আহাদ আহমেদ (এমআই), প্রাণবন্ধু চক্রবর্তী (এনওয়াই), লেখক ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত (এফএল), ড. পূরবী বসু (এফএল), অ্যাক্টিভিস্ট সফেদা বসু (এমএ), সবিতা দাস (এনওয়াই), কমিউনিটি নেতা গোপাল স্যানাল (এনওয়াই), ড. খন্দকার মনসুর (এনওয়াই), শ্যামল চক্রবর্তী (এনওয়াই), পরিমল কর্মকার (এনওয়াই), সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জামাল উদ্দিন হোসেন (আ.), শিল্পী রথীন্দ্র নাথ রায় (এনওয়াই), গৌরব গল্প (ভিএ), সাংবাদিক দস্তগীর জাহাঙ্গীর (ভিএ), সিতাংশু গুহ (এনওয়াই), শিক্ষক ড. দিলীপ নাথ (এনওয়াই), পিএইচডি ছাত্র তৌজিয়াত আহমেদ (এনওয়াই), ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ (এনওয়াই), সৈয়দ রশিদ আহমেদ করমানি (এনওয়াই) প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/কেডি