ড. মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলামের ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মারক বক্তৃতা ও বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে খুলনার উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরীতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা। তিনি বলেন, ‘ড. মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলাম বাংলাদেশের এক কৃতি সন্তান। তিনি ছিলেন এক বিশিষ্ট গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী। জীবনের শেষ বাইশটি বছর তিনি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতা করে অর্জিত অর্থের সঞ্চয় থেকে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রয়াত স্ত্রীর স্মরণে প্রায় এক কোটি টাকা দিয়ে শার্লী ইসলাম লাইব্রেরি স্থাপন করে গেছেন।’
খুলনায় কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘দুটো গুরুত্বপূর্ণ কাল কেটেছে খুলনায়। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পরপরই জেলা প্রশাসক হিসেবে, পরে ১৯৭৯ সালে বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে। সদ্য-স্বাধীন একটি দেশের জন্য সত্তরের দশকটি ছিল ভয়ানক একটা চ্যালেঞ্জ। কেননা তখন সমগ্র দেশটি ছিল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একজন কর্মী হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারায় আমি ধন্য। খুলনায় আমার কর্মকাল অতি স্মৃতিময়। স্মৃতির পর্দায় ভেসে ওঠে বহু ঘটনা ও বহু মানুষের মুখ। এ সব স্মরণ করে আনন্দে ও আবেগে আপ্লুত হই।’
অনুষ্ঠানের ‘আমাদের সাংবাদিকতায় দেশপ্রেম’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা করেন দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টু। এসময়ে তিনি দেশের উন্নয়নে সাংবাদিকদের অবদান ও পেশার নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।
প্রয়াত শিক্ষক ড. মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলামের স্মরণে তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন দশকের সাংবাদিকতা-জীবনে যে কয়েকজন জ্ঞানী ও পন্ডিত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে, তাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। খুলনার একজন কৃতি সন্তান কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এটা শুনেছিলাম বেশ আগেই। কিন্তু ওনার সঙ্গে ঢাকায় দেখা হয়েছে মাত্র একবার। বাংলাদেশের এমন বেশ কয়েকজন ছাত্রের কথা জানি, যারা কেম্ব্রিজ বা অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু সেখানকার কোনো শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় ছিল না। শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করায় শিক্ষাবিদ ও খ্যাতিমান শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে বিশেষ আগ্রহ ছিল। তাই অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নানকে অনুরোধ করেছিলাম ঢাকায় এলে তার ভাইয়ের সঙ্গে যেন পরিচয় করিয়ে দেন। ড. মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলামের-এর সঙ্গে প্রথম দেখার সেই স্মৃতি ও কথোপকথন আজও অমলিন। শ্রদ্ধার সেই মানুষটির মরদেহ যখন কফিনবন্দি হয়ে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরেছিল, তখনো গিয়েছিলাম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ড. মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলামের স্বজনদের সঙ্গে লাশ গ্রহণ করার পর পত্রিকা অফিসে ফিরে নিজেই লিখেছিলাম শোক সংবাদটি।’
অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করার জন্য এককালীন শিক্ষা-বৃত্তি প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান। স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাড আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু।
খুলনা গেজেট/ এসজেড