বর্তমানে বিশ্বে ফেসবুকের একটিভ ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২.৮ বিলিয়ন (২,৮০০,০০০,০০০ জন) যেখানে পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যা ৭ বিলিয়ন। ফেসবুকে তৈরির সময় শুধুমাত্র অনলাইনে যোগাযোগের সুবিধাটি থাকলেও ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ফেসবুক এখন মানুষের এমন একটি আস্থার স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
যেখানে এখন মানুষ ব্যবসা করেছ এই ফেসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা।
খরচ কম ও অনেক বেশি সুবিধা থাকায় এখন অনেক ব্যবসায়ীরাই স্থানীয় ব্যবসার পাশাপাশি অনলাইনে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ঠিক তেমনি অনেক উদ্যোক্তারাও ব্যবসায় শুরুই করছেন অনলাইনের মাধ্যমে, প্রতিদিন শুরু হচ্ছে নতুন নতুন ব্যবসা এই ফেসবুককে কেন্দ্র করেই।
অনলাইন জগতে নিরাপদে থাকার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে সচেতন থাকা ও নিজেকে আপ-টু-ডেট রাখা। প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতন থাকতে হবে ও সব সময় মাথায় রাখতে হবে “থিংক বিফোর ক্লিক”, বর্তমানে লিংক পেলেই হুট করে ঢুকে পড়ার প্রবণতা আমাদের সবার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ছে, এর কারণে বিভিন্ন ক্রাইম বাড়ছে ও অপরাধীরা সুযোগ পাচ্ছে।
যারা ফেসবুকে ব্যবসা করছেন বা ব্যবসায়িক কোনো পেজের/গ্রুপের অ্যাডমিন, এডিটর, মডারেটর বা কোনোভাবে পেজের সাথে জড়িত আছেন তারা অবশ্যই সচেতন থাকবেন, যেকোনো লিংকে ক্লিক করা যাবে না, অপ্রয়োজনীয় কোন আলাপ ফোনে না রাখাই ভালো, অপরিচিত কারো হাতে আপনার মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ দিবেন না এবং সর্বোপরি সচেতন থাকাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
একটি ব্যবসা যদি একবার প্রসারিত হয় আর কাস্টমারদের আস্থা অর্জন করতে পারে সেই ব্যবসায়ীকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না। কিন্তু অনলাইনের ব্যবসার প্রধান উপাদানের মধ্যে একটি হচ্ছে ব্যবসায়ে অনলাইনে নিরাপত্তা, অনলাইনে সিকিউরিটি বা সাইবার সিকিউরিটি। অনলাইন নিরাপত্তার সাথে জড়িয়ে আছে ব্যবসায় প্রাইভেসি সাথে অর্থ-সম্পদ, সম্মান এবং কাস্টমারদের আস্থা ও ভরসা, আর ফেসবুকে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী পেজটি যদি একবার হ্যাকারদের কবলে পরে যায় তাহলে একটি ব্যবসার প্রাইভেসিসহ দীর্ঘদিনের অর্জিত সম্মান, অর্থ-সম্পদ এবং কাস্টমারদের আস্থা ও ভরসা সব কিছুই হারিয়ে যায়। সুতরাং, ফেসবুকে ব্যবসার ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
হুটহাট করে যে কোন ওয়েবসাইটে ঢুকে পড়া, কম্পিউটার বা মোবাইলে যাচাই-বাছাই না করে যে কোন সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা, লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখলেই তার পিছু ছুটা, যেকোন লিংকে হুটহাট ক্লিক করা ও অনলাইন বা সাইবার সিকিউরিটির বিষয়ে হেয়ালি করা ইত্যাদি অভ্যাস বর্জন করতে হবে। অপরাধীদের অপরাধ কমাতে না পারলেও অনলাইনে নিরাপত্তার ব্যাপারে একটু সতর্কতাই পারে অনেক বড় বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে।
অনলাইন ব্যবসায় ও বিজনেস পেজে নিরাপদে থাকার কিছু উপায়-
১। হুটহাট করে লিংককে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে
২। কোন প্রকার অ্যাড বা পপ-আপ অ্যাডে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে (অ্যাড ব্লকের ইউজ করা যেতে পারে)
৩। দরকার ছাড়া কোন প্রকার অ্যাপ্লিকেশন আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ইন্সটল করবেন না
৪। অহেতুক ও ট্রাস্টেড কোন সফটওয়্যার কোম্পানি বা ডেভেলপারের সফটওয়্যার ছাড়া কম্পিউটারে অন্য কোন সফটওয়্যার ব্যবহার বা ইন্সটল না করা ভালো
৫। ভালো একটি এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা যেতে পারে কম্পিউটার বা মোবাইলে
৬। কারো সাথে আইডি পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন না
৭। ফোনের লগইন করা গুগল একাউন্টের ইমেইল ও পাসওয়ার্ড কখনোই কারো সাথে শেয়ার করবেন না
৮। ফোন বা ল্যাপটপ অন্য কারো হাতে দিবেন না
৯। কোন কিছু ডাউনলোড করার আগে যাচাই করে নিন
১০। অ্যাপ ও সফটওয়্যার ইন্সটলের সময় পারমিশন কী নিচ্ছে সেগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখুন, অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় কোন পারমিশন চাইলে সেটি ইন্সটল না করা ভালো
১১। যেসব ডিভাইসটির দ্বারা ব্যবসার কাজ পরিচালনা করা হয় সেগুলো সব সময় আপডেট রাখুন
১২। ডিভাইসের প্রতিটি ব্রাউজার আপ টু ডেট রাখুন
১৩। এমন কোন ওয়েবসাইটে লেনদেন বা জরুরি তথ্য আদান প্রদান করবেন যেসব ওয়েবসাইট ডাটা এনক্রিপশন করে না বা সহজে বলতে গেলে যেসব ওয়েবসাইটে “HTTPS” নেই; “HTTP”-এর শেষে “S” লেখাটি দেখে নিবেন
১৪। লোভনীয় কোন ই-মেইলে যাচাই-বাছাই ছাড়া ক্লিক করা ও লেনদেন করা যাবে না
১৫। ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত সব পাসওয়ার্ডে নম্বর; সিম্বল, ছোট-বড় হাতের অক্ষর মিলিয়ে তৈরি করুন
১৬। পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করা যাবে না; ইমারজেন্সি হলে ভিপিএন ব্যবহার করে করতে পারেন
১৭। জরুরি ডেটা ব্যাকআপ রাখুন; যাতে করে র্যানসামওয়্যার অ্যাটাক হলেও ডেটা পুনরুদ্ধার করা যায়
১৮। ক্র্যাক সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে না,
১৯। অপারেটিং সিস্টেম, অ্যান্টিভাইরাস ও সফটওয়্যার সব সময় আপডেট করতে হবে ও অ্যান্টিভাইরাসের রিয়েল টাইম প্রোটেকশন, অ্যাক্সেস কন্ট্রোল অন রাখতে হবে
২০। ফেসবুকের ক্ষেত্রে ট্রাস্টেড কন্ট্রাক্ট ও টু-স্টেপ অথেনটিকেশন অন রাখতে হবে
২১। সবসময় সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে এবং হ্যাকার, হ্যাকিং ও সাইবার সিকিউরিটির কোন বিষয়ে হেয়ালি করা যাবে না।
খুলনা গেজেট / নাফি