আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি গুমট পরিবেশ বিরাজ করছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। যা আসছে দিনগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার আভাস দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সহিংসতামুক্ত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার পক্ষে মত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর নির্বাচনকালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি।
রোববার ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে উভয় দেশের বিভিন্ন ইস্যু এবং বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে– এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি।
বৈঠকের পর জানতে চাইলে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার সমকালকে ই-মেইলে জানান, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং অহিংস রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্তরায়গুলো আবারও সামনে এনেছে বিএনপি। এ সময়ে বিএনপি নেতারা জানান, সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের আচরণে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাদের মিথ্যা আশ্বাসে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব বিরোধী দল অংশ নেয়। কিন্তু তারা তাদের কোনো আশ্বাস বাস্তবায়ন করেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জাতিসংঘের প্রতিনিধির মাধ্যমে মধ্যস্থতা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ কোনো সময়েই তাদের ওয়াদা ঠিক রাখেনি।
তাই এবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে কোনোভাবেই তাঁরা জাতীয় নির্বাচনে যাবেন না। দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবশ্যই নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। বৈঠকে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন ও বিলুপ্তি নিয়ে আবারও রাষ্ট্রদূতকে স্মরণ করিয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা না থাকলেও সেই ব্যবস্থার অধীনেই নির্বাচন হয়েছে। এর পরের সকল নির্বাচন ওই ব্যবস্থার অধীনে হয়েছে। তাই সংবিধানকে সরকার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলেও এর মধ্যেও সমাধান রয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একজন বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অবস্থান নেই। কারণ কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী স্বাগতিক দেশের সংবিধানের পরিপন্থি যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে নির্বাচন যখন হবে তখন জনগণ যেভাবে চাইবে, সেভাবেই হবে। যখন নির্বাচন হবে তখন যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করা হয়, তাতেও কোনো আপত্তি নেই। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতি যাতে আগের মতো সহিংস না হয়ে ওঠে– এটাই চাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের।
বৈঠকে গণমাধ্যমের ওপর সরকারের চাপ বৃদ্ধি, হুমকি, ভয়-ভীতিসহ নানা বিষয় সামনে এনেছেন বিএনপি নেতারা। নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে বলেও তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। বৈঠকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে সাংবাদিকদের মধ্যরাতে আটক, তাদের নামে একাধিক মামলা, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে বিনা ওয়ারেন্টে আটক, কয়েক দিন গুম করে রাখা এবং পরে পুরোনো মামলায় আটক দেখানোর প্রবণতা নিয়েও আলোচনা হয়।
এ ছাড়া সংসদে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতিবাচক সমালোচনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য নিয়েও বিএনপি নেতারা আলোচনা করেন।