রংপুর বিভাগ ছাড়া দেশের প্রায় সব কটি জেলায় গরমে জীবন ওষ্ঠাগত। আটটি জেলায় চলছে তীব্র দাবদাহ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতেও বায়ুদূষণ আর গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। এ আবহাওয়া যেন মরুভূমির মতোই—দিনে প্রচণ্ড গরম ও রাতে হালকা ঠান্ডা। কোথাও কোথাও ভোরের দিকে হালকা কুয়াশাও দেখা যাচ্ছে।
মরুভূমিপ্রধান দেশগুলোতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০–৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। সেখানে আজ দেশের আটটি জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মরুভূমিতে রাতের তাপমাত্রা সাধারণত দিনের তুলনায় অর্ধেকের কাছাকাছিতে নেমে আসে। বাংলাদেশেও রাতের তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল ১৯৭২ সালের ১৯ মে রাজশাহীতে। সেবার তাপমাত্রা ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠেছিল।
চার দিন ধরে হঠাৎ দেশজুড়ে মরুভূমির মতো তাপমাত্রা কেন দেখা যাচ্ছে, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার এই দেশে গ্রীষ্ম আসার আগেই তীব্র গরম লাগার কারণ কী, আর এ ধরনের আবহাওয়া কি বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন সময়ের জন্য স্বাভাবিক হয়ে গেল—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দেশের শীর্ষস্থানীয় আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলেছে সাংবাদিকরা। মতামত নেওয়া হয়েছে আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা করেন এমন আন্তর্জাতিক ও দেশি সংস্থাগুলোর গবেষকদেরও।
নানা ধরনের প্রাকৃতিক কারণে বাংলাদেশের একেক এলাকায় একেক সময় দাবদাহ বেশি হতো। তবে দুই যুগ ধরে দেশের বড় শহর, রাজশাহী বিভাগ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেশি দাবদাহ হচ্ছে। মূলত এসব এলাকায় নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়া এবং গাছপালা কমে আসার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখন আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছে ।
এর তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, যেসব এলাকায় দিনে বেশি গরম এবং রাতে তাপমাত্রা কমছে সেসব এলাকায় জলাভূমি ও গাছপালা কমে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বায়ুদূষণের কারণে স্থানীয় তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তৃতীয়ত, বৈশ্বিক আবহাওয়ার নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটছে, যা বঙ্গোপসাগর থেকে আসা মেঘমালা সৃষ্টি এবং বৃষ্টিপাতের ধরনকে প্রভাবিত করছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মরুভূমির আবহাওয়া সারা বছরই উত্তপ্ত থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মকালে এ ধরনের আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, পাবনাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় শুধু এপ্রিল মাসে এ ধরনের আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বড় শহরগুলোতেও একই প্রবণতা চোখে পড়ছে। একসময় এসব এলাকায় দিনে তাপমাত্রা বাড়ত, আর রাতে কিছুটা কম। এখন দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অর্ধেকে নেমে আসছে। এই ধরনটিই উদ্বেগের।