ভারতের জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে প্রভাব তৈরির চেষ্টা করছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সাফল্যের বদলে খেলেন বড় ধাক্কা। তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় দলের মর্যাদা কেড়ে নিলো ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
একইসঙ্গে মহারাষ্ট্রভিত্তিক মারাঠা রাজনীতির লৌহপুরুষ খ্যাত শরদ পাওয়ারের এনসিপি (ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি) এবং বাম দল সিপিআইয়ের (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া) সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আর মর্যাদা রইলো না।
তবে সুখবর এসেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিকে জাতীয় দল হিসেবে ঘোষণা করলো জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
জাতীয় দল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে একটি পূরণ করা জরুরি। প্রথমত, লোকসভা নির্বাচনে অন্তত তিনটি রাজ্যে প্রার্থী দিতে হবে একটি দলকে। সেই সঙ্গে জিততে হবে দেশের মোট লোকসভা আসনের ২ শতাংশে।
দ্বিতীয়ত, লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ৪টি রাজ্যে ৬ শতাংশ করে ভোট পেতে হবে। এক বা তার বেশি রাজ্যে পেতে হবে ৪টি লোকসভা আসন। তৃতীয়ত, ৪টি বা তার বেশি রাজ্যে রাজ্য দলের তকমা। উপরোক্ত তিন শর্তের যেকোনও একটি পূরণ করলেই মেলে জাতীয় দলের তকমা।
যার কোনোটাই মানদণ্ডই মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস, এনসিপি বা সিপিআই পূরণ করতে পারেনি। গত বছর জুলাই মাসে তৃণমূল কংগ্রেস, এনসিপি ও সিপিআইকে চিঠি পাঠিয়ে কমিশন বলেছিল, তোমাদের জাতীয় দল হিসেবে মর্যাদা কেন কেড়ে নেয়া হবে না?
তিন দলের থেকেই মেলেনি সন্তোষজনক উত্তর। উল্টো জাতীয় দলের তকমা যাতে খারিজ করা না হয়, সেজন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দরবার করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন যাতে কোনও পদক্ষেপ না নেয়, তার আবেদন করেছিল তৃণমূল।
পাল্টা তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা কেড়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এসব টানাপোড়েনের মধ্যেই সম্প্রতি এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, এ ব্যাপারে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনকে।
এর পরেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ফলে জাতীয় দলের তকমা হারালো তিন দল।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে জাতীয় দলের তকমা পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে ফের আঞ্চলিক দলে পরিণত হলো মমতার দল।
অন্যদিকে, দিল্লির পাশাপাশি গুজরাট, পাঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ডে নির্বাচনী সাফল্য পেয়ে তিনটি শর্তের তিনটি পূর্ণ করতে পেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি দেয়া হয়নি। তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি এখনো সম্পূর্ণ জানেন না। নির্বাচন কমিশনের নোটিশ দেখার পরে এই বিষয়ে দলের সঙ্গে আলোচনার করার পর বলতে পারবেন।
এনসিপির তরফে তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে বলা হয়, আমাদের প্রধান লক্ষ্য ভারতের জাতীয় ঐক্য সংহতি রক্ষা করা এবং মানুষের পক্ষে কাজ করা। বিবৃতি মেলেনি সিপিআই’র তরফেও।
যদিও টুইট করে সদস্য সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, এত অল্প সময়ে জাতীয় দল? এটা অলৌকিকতার চেয়ে কম কিছু নয়। সবাইকে অনেক অভিনন্দন। দেশের কোটি কোটি মানুষ আমাদের এখানে নিয়ে এসেছেন। মানুষ আমাদের কাছে অনেক কিছু আশা করেন। আজ মানুষ আমাদের এই বিশাল দায়িত্ব দিয়েছেন।
একই সঙ্গে এদিন নাগাল্যান্ডের লোক জনশক্তি পার্টি (রাম ভিলাস) এবং ত্রিপুরার ত্রিপরা মোথা কে রাজ্যভিত্তিক দল হিসেবে স্বীকৃতি দিলো নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশভিত্তিক রাজনৈতিক দল বি আর এসের রাজ্যভিত্তিক দলের স্বীকৃতি বাতিল করলো নির্বাচন কমিশন।