কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন, সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলেও ছিলেন না। তারপরও বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি করা হয়েছে এক নিরীহ ব্যবসায়ীকে।
ভুক্তভোগীর নাম সাহিদুল ইসলাম খান। তার বাড়ি নগরীর ২০নং ওয়ার্ডের শেখপাড়া প্রধান সড়কে। শিরোমনি বিসিক শিল্পনগরীতে বাটখারা, ঢালাই সামগ্রী তৈরির কারখানা রয়েছে তার। পুলিশের মামলায় নিজের নাম দেখে একই সঙ্গে বিষ্মিত এবং আতংকিত সাহিদুল ইসলাম। ‘রাজনৈতিক’ মামলায় নিরীহ ব্যবসায়ীর নাম দেখে বিষ্মিত ২০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারাও।
একই মামলায় দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি বিএনপি নেতা নাম গাজী আফসার উদ্দিনকে আসামি করা হয়। যা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়।
গত ১ এপ্রিল দুপুরে খুলনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় রাতেই খুলনা সদর থানায় মামলা করেন এস আই অজিত কুমার দাস। ওই মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৬০ নেতার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় ৭০০/৮০০ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ৫৭ নম্বরে রয়েছে সাহিদুল ইসলাম খানের নাম।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১ এপ্রিল বিকাল ৩টায় উল্লেখিত আসামিরা লাঠিসোটা, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। তারা পরিকল্পিতভাবে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে গুরুতর ও সাধারণ জখম করে।
অথচ বিসিক শিল্পনগরীতে সাহিদুল ইসলামের কারখানার ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ওই সময় তিনি কারখানায় কাজ করছেন। ভিডিও ফুটেজটি প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
২০নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, সাহিদুল ইসলাম কয়েক যুগ ধরে শেখপাড়ায় বসবাস করেন, আমাদের সঙ্গে তো নয়ই অন্য কোনো দলের সঙ্গেও তাকে কখনো দেখেনি। সংঘর্ষের মামলায় তার নাম দেখে অবাক হয়েছি।’
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি চ ম মুজিবর রহমান বলেন, ‘সাহিদুল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। ব্যবসা করেন, নিরীহ মানুষ। যারা তার নাম ঢুকিয়েছে (এজাহারে) তারা খুব অন্যায় করেছে। এসব করে এরা সরকারকে বিতর্কিত করতে চায়।’
শেখপাড়া প্রধান সড়কের সাহিদুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কের পাশে জায়গা নিয়ে স্থানীয় আরেকটি পরিবারের সঙ্গে সাহিদুল ইসলামের বিরোধ ছিলো। জমি নিয়ে মামলা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিরোধ এখনও মেটেনি। এর জের ধরেই মামলায় তার নাম ঢোকানো হতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল ওয়ারা জানান, মামলায় ওয়ার্ড বিএনপির কারো নাম নেই, নাম রয়েছে নিরীহ এক ব্যবসায়ীর। ঘটনা শুনে আমরাও অবাক হয়েছি। পরে বুজলাম, জমি নিয়ে ঝামেলায় আরেকপক্ষ পুলিশের কাউকে ব্যবহার করে তাকে আসামি করিয়েছে।
সাহিদুল ইসলাম খান বলেন, কোনো দিন রাজনীতি করলাম না, কিন্তু রাজনৈতিক মামলার আসামি হলাম। এখন কি করবো, কার যাব বুঝতে পারছি না।
বিয়ষটি নিয়ে মামলার বাদি ও খুলনা সদর থানার এস আই অজিত কুমার দাসের সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তিনি পুরো বিষয়টি শুনে ওসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
খুলনা সদর থানার ওসি মো. হাসান আল মামুন বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, পুলিশের অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত বিরোধে এভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
খুলনা গেজেট/এইচ